মোদী-শিল্প সখ্যে কাঁটা খুচরোয় বিদেশি লগ্নি

বিজেপির ইস্তাহারে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা শিল্পমহলে হতাশা ছড়াল। ভোটের পরে সত্যিই সরকার গঠন হলে নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে অবস্থান বদলাবেন বলে আশা শিল্পমহলের। ইস্তাহার প্রকাশের পর বণিকসভাগুলি সেই দাবিই তুলেছে আজ। আর্থিক বৃদ্ধি ও নতুন চাকরির সুযোগ তৈরিকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির ইস্তাহারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

বিজেপির ইস্তাহারে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা শিল্পমহলে হতাশা ছড়াল। ভোটের পরে সত্যিই সরকার গঠন হলে নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে অবস্থান বদলাবেন বলে আশা শিল্পমহলের। ইস্তাহার প্রকাশের পর বণিকসভাগুলি সেই দাবিই তুলেছে আজ।

Advertisement

আর্থিক বৃদ্ধি ও নতুন চাকরির সুযোগ তৈরিকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির ইস্তাহারে। মোদীর দল যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধিকে লাগাম পরানো, কর ব্যবস্থার সরলীকরণ, বিনিয়োগের পক্ষে সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার কথা বলেছে তাতে উল্লসিত শিল্পমহল। মনমোহন সিংহ সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব নিয়ে হতাশ শিল্পমহল নরেন্দ্র মোদীর থেকে এমন ইতিবাচক বার্তা শোনারই আশা করছিল। কিন্তু প্রত্যাশার বেলুন চুপসে দিয়েছে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে বিজেপির বিরোধিতা।

ইস্তাহারে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর সব ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খোলা থাকলেও, বিজেপি বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেবে না। অর্থাৎ, ওয়ালমার্ট, টেসকো, ক্যারেফোর-এর মতো বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে এ দেশে সুপার মার্কেট খোলার অনুমতি দেওয়া হবে না। বস্তুত বিজেপির বিরোধিতা সত্ত্বেও মনমোহন-সরকারের জমানায় এই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তারা সরকারে এলে সেই ছাড়পত্র প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

বণিকসভাগুলি আজ বিজেপি-র কাছে এই অবস্থান বদলের অনুরোধ জানিয়েছে। ফিকি-র সভাপতি সিদ্ধার্থ বিড়লা বলেন, “বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা নিয়ে বিজেপির অবস্থানে আমরা হতাশ। আশা করি, এই সিদ্ধান্ত ফের পর্যালোচনা করা হবে।” একই সুরে অ্যাসোচ্যাম-এর সভাপতি রানা কপূর বলেছেন, “আমরা বিজেপিকে এই সিদ্ধান্ত বদলের জন্য বোঝানোর চেষ্টা করব।” বিজেপি-র আপত্তির মূল বিষয় ছিল, বহুজাতিক সংস্থাগুলি এ দেশে এসে পাড়ায় পাড়ায় সুপার মার্কেট খুলে চাল-ডাল-তেল-মশলা-শাকসব্জি বিক্রি করতে শুরু করলে মুদির দোকানগুলি উঠে যাবে। এই কৃষকদেরও ক্ষতি হবে। ওই ছোট ব্যবসায়ীরা বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক।

অ্যাসোচ্যাম সভাপতির দাবি, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে অর্থনীতির ভালই হবে, আর তা মুদির দোকানগুলির ক্ষতি না করেই।” সিআইআই সভাপতি অজয় শ্রীরামের মত, “কৃষকরা ভাল দাম পাবেন। ক্রেতারাও লাভবান হবেন। এতে তাই সকলের লাভ।”

এমন নয় যে মনমোহন সরকারের ছাড়পত্র পেয়ে ইতিমধ্যেই এক গুচ্ছ বিদেশি সংস্থা এ দেশে নিজেদের বিপণি খুলে ফেলেছে। তা হলে বিজেপি-র সরকার গঠন হলে যদি সেই ছাড়পত্র তুলে নেওয়া হয়, তাতে সমস্যা কোথায়?

শিল্পমহলের যুক্তি, এ দেশে খুচরো ব্যবসার বাজারের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলার। শুধু যে বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতে আসতে চাইছে তা নয়, এ দেশের সুপার মার্কেট সংস্থাগুলিও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চাইছে। এই সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়বে। সব চেয়ে বিপদে পড়বে ব্রিটিশ সংস্থা টেসকো। ওই সংস্থা ইতিমধ্যেই টাটা গোষ্ঠীর ট্রেন্ট সংস্থার সঙ্গে বিপুল অঙ্কের চুক্তি করে ফেলেছে। সরকারি ছাড়পত্রও আদায় হয়ে গিয়েছে। আবার ফ্রান্সের ক্যারেফোর সংস্থাও এ দেশের একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ব্যবসায় নামার জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছে। বিজেপি সরকারে এসে গোটা নীতিই বদলে ফেললে এ সব লগ্নির প্রস্তাব প্রশ্নের মুখে পড়বে।

শিল্পমহল আশা করছে, এই ধরনের আর্থিক নীতিগত বিষয়ে নতুন সরকার সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নিলে আখেরে যে ক্ষতিই হবে, তা নরেন্দ্র মোদীও বুঝবেন। কিছু দিন আগে ছোট ব্যবসায়ীদের মঞ্চে গিয়ে মোদী বিদেশি লগ্নির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তাতেও কিছুটা আশার আলো দেখছে বণিকসভাগুলি।

মনমোহন সরকারের জমানায় কর নীতি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল শিল্পমহলে। যে ভাবে ভোডাফোনের মতো পুরনো ব্যবসায়িক চুক্তিতে কর আদায় করার চেষ্টা হয়েছিল, তাতেও অস্বস্তি বাড়ে। আজ এই দু’টি বিষয়েই বিজেপির ইস্তাহার স্বস্তির বার্তা দিয়েছে। এত দিন মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির আপত্তিতেই পণ্য-পরিষেবা কর আটকে ছিল। কিন্তু ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতায় এলে বিজেপি এই কর ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হবে। ইস্তাহারে পরমাণু নীতি পুনর্বিবেচনার কথাও বলেছে বিজেপি।

আশায় বুক বাঁধলেও শিল্পমহলের জন্য কাঁটাও আছে বিজেপির ইস্তাহারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement