মোদী বনাম মমতা যুদ্ধে কার লাভ, প্রবল ধন্দে বাম শিবির

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর তেড়েফুঁড়ে আক্রমণের কী রকম প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়বে, তার হিসাব সব কষতে গিয়ে কঠিন অঙ্কের মুখে বাম নেতৃত্ব! সোজা হিসাবে বাম নেতাদের মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মোদী যে ভাবে মমতা ও তাঁর সরকারকে নিশানা করছেন, তাতে বিজেপি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কেই ভাগ বসাবে। তাতে বামেদের লাভ হওয়ারই কথা। কারণ, তৃণমূলের ভোট কমলেও তাতে বামেদের ভোট অক্ষুণ্ণ থাকার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর তেড়েফুঁড়ে আক্রমণের কী রকম প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়বে, তার হিসাব সব কষতে গিয়ে কঠিন অঙ্কের মুখে বাম নেতৃত্ব!

Advertisement

সোজা হিসাবে বাম নেতাদের মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মোদী যে ভাবে মমতা ও তাঁর সরকারকে নিশানা করছেন, তাতে বিজেপি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কেই ভাগ বসাবে। তাতে বামেদের লাভ হওয়ারই কথা। কারণ, তৃণমূলের ভোট কমলেও তাতে বামেদের ভোট অক্ষুণ্ণ থাকার কথা। মমতাও পাল্টা অভিযোগ করছেন, বামেরাই বিজেপি-কে তৃণমূলের ভোট কাটার ডাক দিয়েছে। কিন্তু বাম শিবিরে এখন অন্য আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। বিজেপি না-থাকলে শাসক দল-বিরোধী ওই ভোট বামেরাই পেতে পারতো। সেখানে বিজেপি ভাগ বসাচ্ছে। আবার হিন্দু ভোট মেরুকরণেরও চেষ্টা করছে বিজেপি। সব মিলিয়ে রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান তাঁদের ভবিষ্যতে কতটা ক্ষতি করবে, তা-ই নিয়ে উদ্বেগে আছেন বাম নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, আশঙ্কা সত্যি হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শুধু তৃণমূল নয়, বাম, কংগ্রেস, সকলের জন্যই বিজেপি বড় বিপদ হয়ে উঠতে পারে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাম নেতারা বিজেপি-তৃণমূলের লড়াইকে ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসাবেই তুলে ধরতে চাইছেন। এক দিকে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের ‘নরম’ বার্তা এবং অন্য দিকে মোদীর কড়া আক্রমণ এই দ্বিমুখী ঘটনার জন্য বামেদের এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সুবিধাও হয়ে যাচ্ছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের বক্তব্য, “তৃণমূল সাম্প্রদায়িক সংখ্যালঘু নেতাদের মদত দিচ্ছে। সংখ্যালঘু তোষণের জন্য মমতা ও তৃণমূলকে দুষছে বিজেপি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ও রাজনাথ সিংহ একই সঙ্গে মমতাকে সমালোচনা ও তুষ্ট করছেন। পুরনো এনডিএ-শরিক তৃণমূলের প্রতি বিজেপি-র বার্তাটা স্পষ্ট ভোটের পরে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন!” সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তেরও অভিযোগ, “বিজেপি আসলে নরমে-গরমে ভোটের পরে মমতা, জয়ললিতা ও মায়াবতীর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।”

Advertisement

বিজেপি-র দৌলতে ভোট ভাগাভাগির খেলা নিয়ে বেশি মাথা না-ঘামিয়ে সিপিএমের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপি-র অবনী রায়েরা আপাতত বাংলায় নিজেদের ভোটের ভাগ ধরে রাখার জন্য ঝাঁপাতে চাইছেন। কিন্তু সেখানেও তাঁদের আশঙ্কায় রাখছে শাসক দলের তাণ্ডব ও রিগিংয়ের অভিযোগ। তৃতীয় দফার ভোটের পরে যা মাথাচাড়া দিয়েছে।

ভোটগ্রহণ শুরুর আগে এপ্রিলে সিপিএমের শেষ রাজ্য কমিটির বৈঠকে জেলাভিত্তিক রিপোর্ট বলেছিল, রাজ্যের কম-বেশি সব আসনেই বিজেপি-র ভোট বাড়বে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে লাভ-ক্ষতি তখনও বোঝার উপায় ছিল না। পরবর্তী কালে মোদী আক্রমণের সুর চড়ানোয় হিসাব আরও জটিল হয়েছে। সিপিএমের নীলোৎপল বসুর যুক্তি, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র নিজস্ব ভোট নেই। মমতার ভোটই কাটবে তারা। কিন্তু তাতে আমাদেরই ক্ষতি হবে। কারণ, মমতার সরকার সম্পর্কে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের সেই ভোট পুরোটাই আমাদের দিকে আসত। বামেদের যাতে লাভ না হয়, বিজেপি এখন সেই চেষ্টাই করছে। তাই মোদী মমতাকে আক্রমণ করছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement