তিল থেকে তাল হতে যে সময় লাগবে না, সে আশঙ্কা ছিলই। সরকারি কাজ ও জনসংযোগ ব্যবস্থায় হিন্দি ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক আজ আরও ফুলে ফেঁপে উঠল।
ভাষা-বিতর্ক নিয়ে গত কাল নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন ডিএমকে নেতা করুণানিধি। তামিল আবেগ নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকলেন না মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও। বন্ধু নরেন্দ্র মোদীকে সতর্ক করে দিয়ে আজ জয়াও বললেন, “ওই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিক সরকার। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা এখনও স্পর্শকাতর বিষয়।” ইংরেজি ভাষাকে সরকারি কাজ, জনসংযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী।
হিন্দি ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে সরকার গত ২৭ মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তাতে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের কাজ মানুষকে জানাতে হিন্দি ভাষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তখনই তোলপাড় হয়নি। ডিএমকে নেতা করুণানিধির টনক নড়ে কাল। তামিল আবেগে ভর করে ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। আর তার পরেই আজ জয়ললিতা, ভাইকো, রামডস-সহ তামিলনাড়ুর বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতারাও তোপ দাগলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এমনকী কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “যাঁরা হিন্দি ভাষাভাষী নন, এই সিদ্ধান্তে চটে যেতে পারেন।”
মোদীর সিদ্ধান্তে সব চেয়ে বেশি চটার কথা ছিল শরিক দল শিবসেনার। যাঁরা মরাঠি আবেগকে পুঁজি করে রাজনীতি করেন। কিন্তু সেই শিবসেনা সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, হিন্দি জাতীয় ভাষা। তাই জাতীয় ভাষার প্রসারকে গুরুত্ব দেওয়া সাধু সিদ্ধান্ত।
সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট, দলিত নেত্রী মায়াবতী, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা অবশ্য আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, হিন্দি জাতীয় ভাষা হলেও দেশের সব মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন না। তাই হিন্দিকে কেবল অগ্রাধিকার না দিয়ে ভারসাম্য রাখা উচিত।
অনেকে মনে করেন, হিন্দি ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নেপথ্যে মোদীর রাজনীতি রয়েছে। জাতীয়তাবাদের আবেগ ঢেলে দিতে চাইছে বিজেপি। তার ওপর বিজেপি-র ঘাঁটি হিন্দিবলয়ের মানুষের কাছে বার্তা দিতে চাইছে সরকার। আর তাই সমালোচনা হলেও বিজেপি তথা সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকারই বার্তা দিয়েছে আজ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজুজু জানিয়ে দিয়েছেন, হিন্দি ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অর্থ অন্য আঞ্চলিক ভাষাকে অবহেলা করা নয়। জাতীয় ভাষার প্রসারই তাদের উদ্দেশ্য।