নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে সরিয়ে হোয়াইট হাউস কার্যত স্বীকার করে নিল যে গত দু’বছর ভারত-মার্কিন সম্পর্ক মধুর করার প্রশ্নে ৬৭ বছর বয়স্ক এই কূটনীতিবিদ সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
ভারতে লোকসভা ভোট যখন দোরগোড়ায় তখনই পাওয়েলের সরে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক শিবিরে। সূত্রের ব্যাখ্যা, দু’বছর যাবৎ ভারত-মার্কিন সম্পর্ক শীতল হয়েছে। সেই দায় ঘাড়ে নিয়ে তাঁকে সময়ের আগেই ফিরতে হল। মার্কিন দূতাবাস সূত্রের বক্তব্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জট ছাড়ানো নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হননি ন্যান্সি। বরং কয়েকটি বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করেছেন। তাই তাঁকে সরতে হয়েছে।
দূতাবাস সূত্রে খবর, নিউ ইয়র্কে দেবযানী খোবরাগাড়ের হেনস্থার ঘটনায় পাওয়েলের উপরে সব চেয়ে বেশি চটেছিল ওয়াশিংটন। দেবযানীকে গ্রেফতার করা হলে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা পাওয়েলের কাছে জানতে চায় ওয়াশিংটন। ন্যান্সি জানান বিষয়টি নিয়ে বিশেষ প্রতিক্রিয়া হবে না। শুধু তাই নয়, মার্কিন বিদেশ দফতরকে না জানিয়েই পাওয়েল বিশেষ একটি ভিসা দেবযানীর পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডের স্বামী ও দুই সন্তানকে দিয়ে দেন। বাস্তবে কড়া অবস্থান নেয় ভারত। ফলে, ন্যান্সির রিপোর্ট নিয়ে ওবামা প্রশাসনে প্রশ্ন দেখা দেয়।
ওবামা প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসের সঙ্গে পাওয়েলের মতপার্থক্যের ঘটনাও গত কয়েক মাস ধরে বেড়েছে। ভারতের পরমাণু ক্ষেত্রে মার্কিন সংস্থাগুলির বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রশ্নে কড়া মনোভাব নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন কেরি এবং রাইস। তাঁদের অভিযোগ, এই বিষয়ে নয়াদিল্লির উপরে যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারেননি ন্যান্সি।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এমন একটি সময়ে ন্যান্সিকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যখন ভারতে নির্বাচন দোরগোড়ায়। বিষয়টি এমন নয় যে, নরেন্দ্র মোদী আসবে ধরে নিয়েই এই পরিবর্তন করল হোয়াইট হাউস। এই সিদ্ধান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক কারণে। আগামী সরকারের সঙ্গে নতুন ভাবে দৌত্য শুরু করতে পারবেন নয়া দূত। যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন, মার্কিন দূতাবাসের এই ‘বদল’কে কাজে লাগাচ্ছে ওবামা প্রশাসন।
পরমাণু দায়বদ্ধতা বিলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ লঘু করা নিয়ে আমেরিকার ধারাবাহিক আবেদন গত দু’বছর যাবৎ নাকচ করে এসেছে সাউথ ব্লক। বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে যে বিলটি পাশ করা হয়েছে তার অন্যথা করা যাবে না। এই বিষয়টি ছাড়াও ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এবং শ্রীলঙ্কা ও রাশিয়া-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে দু’বছর ধরে নয়াদিল্লি ঘোরতর বিরোধিতা করেছে মার্কিন নীতির। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, মার্কিন বিরোধিতা ভারতের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমেরিকা যদি ভারতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কোনও অবস্থান নেয় তা হলে সে ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের বিরোধী পথে হাঁটতেই হবে।
এই ধরনের টানটান পরিস্থিতিতে পেশাদার কূটনীতিবিদের তুলনায় রাজনৈতিক ভাবে নিযুক্ত কর্তা বেশি কাজ দেয় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে কূটনৈতিক শিবিরে। এটা ঘটনা যে দিল্লির দূতাবাসের শীর্ষ পদে আমেরিকা অনেক সময়ে রাজনৈতিক নিয়োগই করে থাকে। দেখা যাচ্ছে ১৯৯৭ থেকে ২০১১ এই ১৪ বছরে পাঁচ জন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে চার জনই রাজনৈতিক ভাবে নিযুক্ত। অনেকের ধারণা, ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে যে রাজনৈতিক মননের প্রয়োজন ছিল তা দেখাতে পারেননি ন্যান্সি। দিল্লির মার্কিন দূতাবাস তাই নয়া প্রধানের অপেক্ষায়।