বই-বোমার আতঙ্ক কয়লা নিয়েও

ভোটে কী হবে পরের কথা! তার আগে বইয়ের ঘায়েই এখন মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা কংগ্রেসের! ইউপিএ-র অন্দরের রসায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর সদ্য প্রকাশিত বইটি ঘিরে এমনিতেই ঘোর বিতর্কে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে বলতে হচ্ছে, সনিয়া গাঁধীও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ফাইলপত্র দেখতেন বলে বারু যে দাবি করেছেন, তা একেবারেই ভিত্তিহীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৫
Share:

ভোটে কী হবে পরের কথা! তার আগে বইয়ের ঘায়েই এখন মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা কংগ্রেসের!

Advertisement

ইউপিএ-র অন্দরের রসায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর সদ্য প্রকাশিত বইটি ঘিরে এমনিতেই ঘোর বিতর্কে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে বলতে হচ্ছে, সনিয়া গাঁধীও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ফাইলপত্র দেখতেন বলে বারু যে দাবি করেছেন, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। এর মধ্যেই মনমোহন জমানায় কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে কেলেঙ্কারি ও কেচ্ছা হাটে ভাঙতে আগামিকাল একটি বই প্রকাশ করতে চলেছেন প্রাক্তন কয়লা সচিব পি সি পরাখ। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সততা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও, যে বইয়ে পরাখও মনমোহনের দুর্বল কর্তৃত্বের কথাই তুলে ধরেছেন বলে খবর। সেই সঙ্গে পরাখের অভিযোগ, কায়েমি স্বার্থ রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ছ’মাস আগে কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে নেমে সিবিআই প্রাক্তন এই কয়লা সচিব ও কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে একই সঙ্গে মামলা দায়ের করেছিল। তখন শিল্পমহল যেমন বিড়লার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনই পরাখের সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে সওয়াল করেছিলেন প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব টি এস আর সুব্রহ্মণ্যন-সহ অবসরপ্রাপ্ত বেশ কিছু শীর্ষ আমলা। তাতে বল পেয়ে পরাখ তখনই বলেছিলেন, “কয়লা কেলেঙ্কারির জন্য যদি আমাকে দায়ী করা হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রীও সমান ভাবে দায়ী।” পরাখের সে দিনের মন্তব্যই যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল মনমোহনকে। এ বার পুরো দস্তুর একটি বই, ‘ক্রুসেডর অ্যান্ড কনস্পিরেটর কোলগেট অ্যান্ড আদার ট্রুথস্’। তাতে কী বিস্ফোরক অপেক্ষা করছে তা নিয়ে জোর জল্পনা এখন ভোটের বাজারে।

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস শিবিরে এখন থেকেই উদ্বেগের স্রোত বইছে। সূত্রের খবর, বইটি প্রকাশের আগেভাগেই তার সার বিষয়বস্তু নিয়ে খোঁজখবর করতে শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেসের নেতারা। যাতে পাল্টা যুক্তি তুলে ধরতে দেরি না হয়। কংগ্রেসের উদ্বেগ বাড়িয়ে ইতিমধ্যেই পরাখের বইয়ের সার বিষয়বস্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কয়লা খনি বণ্টনের ব্যাপারে ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত কেন ভুল ছিল ত নিয়ে আলাদা একটি পরিচ্ছদই রয়েছে বইটিতে। কয়লা মন্ত্রক যখন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছিল, তখন পরাখই ছিলেন সেই মন্ত্রকের সচিব। তাঁর কথায়, “নিলামের মাধ্যমে কয়লা খনি বণ্টনের ব্যাপারে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলির আপত্তি তো ছিলই। তা ছাড়া সেই প্রস্তাবে শিবু সোরেন বা দশরথী নারায়ণ রাওয়ের মতো মন্ত্রীরা বাধা দিয়েছিলেন এবং অন্তর্ঘাত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের কায়েমি স্বার্থ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন।”

জানা যাচ্ছে, পরাখ তাঁর বইয়ে এ-ও লিখেছেন, সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিনহার সৎ সাহস থাকলে কয়লা খনি বণ্টন মামলায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত। কারণ, কয়লা খনি বণ্টনের সব সিদ্ধান্তে তিনিই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিলেন।

পরাখের বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে কাল প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব টি এস আর সুব্রহ্মণ্যন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ভাবে উপস্থিত থাকার কথা সদ্য প্রাক্তন কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) বিনোদ রাইয়ের। ইউপিএ জমানায় টুজি কেলেঙ্কারিতে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে যাঁর নেতৃত্বে রিপোর্ট দিয়েছিল সিএজি। যে কারণে, বিনোদ রাইকে তখন ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েনি কংগ্রেস।

তবে রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য ভোট-বাজারে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু কংগ্রেসের মুশকিল হল, ইউপিএ সরকারে মুখ বাঁচাতে যতই পাল্টা যুক্তি তুলে ধরা হোক, এতে মনমোহনের কর্তৃত্বহীনতা এবং তাঁর সরকারের দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মনে ধারণা আরও মজবুত হবে। তার প্রভাব ভোটে পড়তেই পারে। বিশেষ করে রাহুল গাঁধী যখন পরিচ্ছন্ন প্রশাসনের বার্তা দিয়ে প্রচারে নতুন ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছেন, তখন বারু বা পরাখের বই তাঁকে পিছনে টেনে ধরছে।

স্বাভাবিক ভাবেই রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে বিজেপি। বারুর বই প্রসঙ্গে আজ লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছেন, “প্রমাণ হল যে মনমোহন দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।” অরুণ জেটলির বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীর বহু কার্যকলাপের সাক্ষী সঞ্জয় বারু। যে ভাবে মনমোহনের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদাকে খাটো করা হয়েছে।”

আর পরাখের বই! তা নিয়ে কী বলছে বিজেপি? জবাবে দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন, “এক দিনে সব অস্ত্র শেষ করব কেন? কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে বইটি প্রকাশিত হোক, তার পরেই যা বলার বলব।”

তবে অস্বস্তি ঢাকার বন্দোবস্ত করতে আগে থেকেই গান গেয়ে রেখেছে কংগ্রেস। দলের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, পরাখ আসলে সিবিআই মামলা থেকে বাঁচতে আত্মপক্ষ সমর্থনে এ সব বলছেন বা লিখছেন। এর কোনও গুরুত্ব নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement