শরদ পওয়ারের খাসতালুক বারামতীতে পৌঁছে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মহারাষ্ট্রে ভোট পর্বের তিক্ততা কাটিয়ে এখন বিজেপি-শিবসেনার জোট সরকার চলছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে দূরে ছিটকে পড়ে সময়ে সময়ে ক্ষোভ দেখাতে ভুলছেন না উদ্ধব ঠাকরে। বিশেষ করে দিল্লিতে বিজেপির ভরাডুবির পরে সরাসরি মোদীকে নিশানা করেছেন তিনি। ক’দিন আগেই মন্তব্য করেছেন, কেজরীবালের ঝাড়ুর সামনে ময়লায় পরিণত হয়েছে বিজেপি। আর গোটা বিপর্যয়ের দায় মোদীর উপরেই ঠেলে দিয়েছেন তিনি। রীতিমতো টুইট করে বলেছেন, অন্য রাজ্যে জয়ের সাফল্য যদি মোদীর হয়, তা হলে এ বার দিল্লির হারের দায় তাঁরই নেওয়া উচিত। উদ্ধবের এ হেন ব্যাখ্যায় বেজায় চটেছে মোদী শিবির। আর এর মধ্যেই এ দিন মহারাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে নতুন সমীকরণের জল্পনা উস্কে দিলেন মোদী।
নির্বাচনের প্রচারের সময়েও তিক্ততা পাশে সরিয়ে রেখে বারামতীতে পওয়ার ও মোদী দুই নেতাই পরস্পরের প্রশংসা করেছেন। মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের প্রচারের সময়ে এনসিপি-কে ‘ন্যাচারাল করাপ্ট পার্টি’ আখ্যা দিয়েছিলেন মোদী। আজ তাঁর মন্তব্য, “গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে আমি ভারত সরকারের থেকে কোনও সমস্যায় পড়লেই শরদ রাওকে ফোন করতাম। উনি রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাকে সাহায্য করতেন।” মোদী জানান, মাসে দু-তিন বার পওয়ারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। এ জন্যই পওয়ারকে সম্মান জানাতে তিনি বারামতীতে এসেছেন।
মজার বিষয় হলো, এনসিপি নেতাকে ঘিরে তাঁর পরিবর্তিত অবস্থান সংবাদ মাধ্যমের নজর এড়াবে না, বুঝতে পেরেই মোদীর রসিকতা, “মিডিয়ার জন্য আজ বিশেষ দিন। তাঁরা ভাবছেন, ভোটের সময়ে আমি কী বলেছিলাম, আর আজ কী বলছি!” এর পরেই তাঁর ব্যাখ্যা, “গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই!” রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভিতরে আদানপ্রদানের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাজির করেছেন তিনি। আর উন্নয়নের কাজে মোদীকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন পওয়ারও।
সব মিলিয়ে যা, তা হলো, মুম্বইয়ের কুর্সিতে নতুন সমীকরণের জল্পনা, উদ্ধবকে কড়া বার্তা দেওয়ার চেষ্টা। মহারাষ্ট্রে ভোটের ফল বের হওয়ার পরেই শরদ পওয়ারের দল বিজেপিকে সমর্থন দিতে পা বাড়িয়ে ছিল। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে দীর্ঘ দরকষাকষির শেষে পুরনো বন্ধু শিবসেনাকেই সরকারে সামিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদী। মহারাষ্ট্রে জোট সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রেও মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন শিবসেনা নেতা অনন্ত গীতে। তবে শরিকদের চাপের কাছে যে তিনি কোনও ভাবেই মাথা নোয়াবেন না, তা বোঝাতেই উদ্ধবকে তোয়াক্কা না করে প্রাক্তন শিবসেনা নেতা সুরেশ প্রভুকে রেলমন্ত্রী করেছেন মোদী। সেই তিক্ত সম্পর্কে এ বার আরও ভাঙনের ইঙ্গিত।