জঙ্গি-বিরোধী পুলিশি অভিযানকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে মাওবাদী প্রভাবিত ঔরঙ্গাবাদের মদনপুর থানা এলাকা উত্তাল হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালালে ১৭ বছরের এক কিশোর এবং এক মহিলার মৃত্যু হয়। জখম হয়েছেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে তিন জন গ্রামবাসী পুলিশের গুলির আঘাতে জখম। দুই পুলিশ কর্মীও জখম হয়েছেন। রাত পর্যন্ত তাঁদের জ্ঞান ফেরেনি। ঘটনার পরে ঔরঙ্গাবাদের পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসক ঘটনাস্থলেই ঘাঁটি গেড়েছেন। জেলাশাসক নবীনচন্দ্র ঝা বলেন, “পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছাড়াও বোমা ছোড়া হয়। ব্লক অফিসে আগুন লাগিয়ে লোকজনকে মারার পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।” রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনার সূত্রপাত কাল রাতে। মাওবাদী প্রভাবিত মদনপুর এলাকার সহজপুর গ্রামে সিআরপিএফ এবং জেলা পুলিশের যৌথ অভিযান চলছিল। সেই সময় মাওবাদী সন্দেহে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অভিযানের নামে যৌথ বাহিনী রাতে গ্রামে গিয়ে তাঁদের উপরে অত্যাচার চালায়। মুখ না খোলায় মহিলাদেরও মারধর করে। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবারই অভিযানের নামে পুলিশ গ্রামবাসীদের উপরে জুলুম চালায়। সেই কারণে আজ সকালে সহজপুরের গ্রামবাসীরা মদনপুর থানায়, পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানাতে যায়। কিন্তু তাঁদের কথা না শুনে থানা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। এই ভিড়ে মহিলারাও প্রচুর সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। ক্ষিপ্ত জনতা ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। জাতীয় সড়কের পাশে মদনপুর ব্লক অফিসে একদল জনতা ততক্ষণে ধর্নায় বসে যায়। ধর্না না তোলায় জওয়ানরা গ্রামবাসীদের হঠাতে লাঠি চালায়। পরিস্থিতি এরপরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। ব্লক অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়, কর্মচারিদের মারধরও করা হয়। ব্লক অফিস সংলগ্ন পুলিশের সার্কেল ইন্সপেকটরের অফিসে আগুন লাগানো হয়। বিডিও এবং কয়েকজন জওয়ানকে অফিসের ভিতরে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের ধারণা, এই আন্দোলনের পিছনে মাওবাদীরাও সামিল হয়েছিল। তাদের উস্কানিতেই পরিস্থিতি ক্রমে ঘোরালো হয়ে ওঠে।
জেলাশাসকের বক্তব্য, ঘটনাপ্রবাহ ক্রমশ আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলির আঘাতে আন্দোলনকারী এক মহিলা এবং এক কিশোরের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তিন জন গুলিবিদ্ধ গ্রামবাসীকে গয়ার মগধ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতদেহ নিয়ে গ্রামবাসীরা ফের জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবরোধ তোলে। জেলা প্রশাসন মৃতদেহের দখলও নেয়। রাজ্য সরকার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।