নমো-র মনোনয়নে নাম জুড়ে ভিআইপি চা-বিক্রেতা কিরণভাই

সামান্য চায়ে যে এত চমক আগে বুঝতে পারেননি কিরণভাই মহিদা। বডোদরা আদালতের উল্টো দিকে, গাছের গোড়ায়, গুমটি ঘরে উকিল গলিতে চা বেচছেন ৩৫ বছর। বাবার হাত ধরে ব্যবসায় হাতেখড়ি, তা এখন ছেড়েছেন যুবক ছেলের হাতে। বছরের পর বছর জনতাকে চা খাইয়ে প্রাপ্তির ঘড়া যে এ ভাবে ভরে উঠবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি মহিদা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর মনোনয়ন পত্রে প্রস্তাবক হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই যেন বদলে গেছে সব কিছু।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

বডোদরা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

কিরণভাই মহিদা।নিজস্ব চিত্র ।

সামান্য চায়ে যে এত চমক আগে বুঝতে পারেননি কিরণভাই মহিদা।

Advertisement

বডোদরা আদালতের উল্টো দিকে, গাছের গোড়ায়, গুমটি ঘরে উকিল গলিতে চা বেচছেন ৩৫ বছর। বাবার হাত ধরে ব্যবসায় হাতেখড়ি, তা এখন ছেড়েছেন যুবক ছেলের হাতে। বছরের পর বছর জনতাকে চা খাইয়ে প্রাপ্তির ঘড়া যে এ ভাবে ভরে উঠবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি মহিদা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর মনোনয়ন পত্রে প্রস্তাবক হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই যেন বদলে গেছে সব কিছু।

তারই মতো কিশোর বয়সে নরেন্দ্র মোদীর চা বিক্রি করার কাহিনি অজানা ছিল না মহিদার। জীবিকার সেই ক্ষীণ যোগসূত্রই তাঁর কপাল খুলে দিয়েছে। মোদীর প্রস্তাবক হিসাবে বডোদরায় এখন সম্মানের জ্যাকপট লেগেছে তাঁর। দু সপ্তাহ ধরে মানুষ আসছেন তাঁকে দেখতে। তাদের চোখের ভাষায় সম্ভ্রম পড়তে ভুল হচ্ছে না উকিল গলির চা-বিক্রেতার।

Advertisement

মোদীর মনোনয়নপত্রের একদিকে বডোদরার গায়কোয়াড রাজমহিষী শুভাঙ্গিনী দেবী। অন্য দিকে তিনি। প্রতিবেশীরা তো বটেই , মেয়ের শ্বশুরবাড়িতেও আজকাল তার খাতির-যত্ন একটু বেশি। দোকান ঘরে নিজেরই বানানো চায়ে চুমুক দিতে দিতে মহিদা বললেন, “আগে থেকে কিছুই জানতাম না। এখানকার এমএলএ সৌরভ ভাই পটেল আমার নাম ঘোষণার পরই সব জানতে পারি। দলের কর্মী হিসাবে গর্ব হচ্ছে।” তবে বিজেপির সূত্র জানাচ্ছে, কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই বডোদরায় মোদীর প্রস্তাবক হিসাবে চা-বিক্রেতাকে খুঁজে বার করতে নির্দেশ আসে। তখন দলীয় কর্মী মহিদাকে বেছে নেওয়া হয়।

২০০২-এ ক্ষমতায় এসেছেন যখন, তখন থেকেই গাঁধীনগরের মণিনগর থেকে ভোটে লড়ে এসেছেন মোদী। তাঁর যৌবনের মূল কর্মভূমি ছিল মরাঠা-গায়কোয়াডদের রাজ্য বডোদরা। আজও বডোদরায় এলে পুরনো সঙ্ঘ কর্মীদের সঙ্গে গল্প করতে বসে যান তিনি। যদিও ভোটের দামামা বেজে উঠতেই এখন আর গল্পের সময় নেই। বরং কালও এখানে সভা করে মোদী তাঁর ‘টার্গেট ২৭২’-এর লক্ষ্যমাত্রা মনে করাচ্ছেন কর্মীদের। যার মধ্যে গুজরাত থেকেই লক্ষ্য, ২৬এ ২৬।

তবে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে দৌড় শুরু করা ‘মোদী সাব’ নিজভূমেই টার্গেট-২৬ বাস্তবায়িত করতে পারবেন কিনা, সন্দেহ খোদ বিজেপি কর্মীদেরই। বডোদরায় জেতা নিয়ে সংশয় নেই। প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের মধুসূদন মিস্ত্রিকে বডোদরার রাস্তায় নেমে মোদীর পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়তে দেখা গিয়েছিল। ব্যাস ওই পর্যন্ত। তারপর থেকে আর বিশেষ পাত্তা পাওয়া যায়নি মিস্ত্রির। এখানে পা মাড়াননি রাহুলও। কোর্ট চত্বরে বিজেপি কার্যালয়ের কর্মী দিনেশ পটেল বললেন, “আরে কংগ্রেসের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ‘আব কি বার’ বললে ওরাই মুখ ফসকে বলে ফেলছেন ‘মোদী সরকার’!”

এই আসনে সমস্যা নেই, তবে ‘গুজরাত অস্মিতার’ হাওয়া তুলে রাজ্যের সবক’টি আসনে জেতার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন মোদী, তা নিয়ে সংশয় দলে। অন্তত কুড়িটা আসন যে ঝুলিতে আসবে, এমনটাও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছেন না দলের অনেকেই। মধ্য গুজরাতে দলের সাফল্যের আশাতেই মোদী বেছেছেন বডোদরার আসনটি। এখানকার খেডা ও আনন্দ আসনে বর্তমানে সাংসদ হলেন যথাক্রমে কংগ্রেসের দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিনশা পটেল ও ভারত সিংহ সোলাঙ্কি। বিজেপির আশা, মোদী ঝড়ে এখানে কংগ্রেসের আধিপত্য খর্ব করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহ বাঘেলাকে ঘরে ফেরাতে তৎপর ছিলেন রাজ্য বিজেপির একাংশ। তলতলে যোগাযোগও রাখছেন তাঁরা। কিন্তু বাঘেলার অন্তর্ভুক্তিতে আপত্তি জানায় সঙ্ঘ-সহ শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। ফলে সেই পরিকল্পনাও শিকেয় তুলতে হয়। এতে চটেছেন বাঘেলাও। তাই পূর্ব গুজরাতে বাঘেলা কেমন ভোট কাটেন, তা-ও চিন্তায় রেখেছে বিজেপিকে। উত্তর গুজরাতেও দল যে দারুণ ফল করবেই এমনটাও বলতে পারছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কেন না, গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি ক্ষমতায় ফেরার হ্যাটট্রিক করলেও, ওই এলাকার ৩৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জেতে ১৭টিতে। এই উত্তর গুজরাতের গাঁধীনগর থেকেই প্রার্থী লালকৃষ্ণ আডবাণী। সংশ্লিষ্ট এলাকা গুলিতে তাঁর প্রভাব কাজে লাগাতে চাইছে দল। দিল্লি জয়ে মোদীর অন্যতম অস্ত্র হল মডেল গুজরাত। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের ছবি তুলে ধরে দেশকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন বিক্রি করছেন তিনি। বারো বছরে সড়ক, শিল্প, বিদ্যুতের মতো ক্ষেত্রগুলিতে যে রাজ্য এগিয়ে গিয়েছে তা একবাক্যে মেনেছেন বডোদরা, ভাবনগর, আমদাবাদ, ভারুচের মানুষ। কিন্তু কোথায় একটা শূন্যতা প্রদীপের তলার অন্ধকারের মতো রয়ে গিয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বড় অংশ মুদ্রাস্ফীতির শিকার, তেল, বিদ্যুতের দাম সবথেকে বেশি, কর বসানোয় অনান্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে গুজরাত, আর এখানে বেকারি বাড়ছে দ্রুত। মোদী বিরোধীদের অভিযোগ, দেশবাসীকে স্বচ্ছ প্রশাসনের স্বপ্ন ফিরি করে বেড়াচ্ছেন যিনি, সেই মোদী নিজের প্রশাসনকে দুর্নীতি মুক্ত করতে ব্যর্থ। প্রশাসনের পরতে পরতে জড়িয়ে দুর্নীতি। সরকারি শিক্ষা বা স্বাস্থ্য পরিষেবার সাফল্য কতটা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কৃষক আত্মহত্যা বা কম দামে অম্বানী-আদানির জমি দেওয়া নিয়েও সরব হয়েছে মোদী বিরোধীরা। রাজ্যের দু’টি আসন থেকে এবার বিজেপিকে বেগ দিতে চলেছে আম আদমি পার্টিও।

সব মিলিয়ে পরীক্ষার পাঁচ দিন আগে জানা পাঠ্যসূচি কিছুটা গুলিয়ে যাওয়ার দশা মোদী শিবিরে। বিজেপি যদিও দাবি করছে, গুজরাত এখন মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার স্বপ্নে ভাসছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement