কুমারগ্রামের চ্যাংমারির শরণার্থী শিবিরে ছবি তুলেছেন নারায়ণ দে।
বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সঙ্কোশ নদী পার হয়ে কোকড়াঝাড়ের কুশালবাড়ি থেকে কোনও মতে কুমারগ্রামে পৌঁছেছেন ৯০ বছরের বৃদ্ধা রানি সোরেন। ক্যাম্পের নিরাপদ আশ্রয়েও এখনও আতঙ্ক তাড়া করছে তাঁকে। তবুও ঘরে ফেরার আর্তি চোখে মুখে। কমিউনিটি হলের গাদাগাদিতে এরকম অনেক মুখ। কুমারগ্রামে আশ্রয় নেওয়া অসমের শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আজ, শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুমারগ্রামে আসছেন। পুন্ডি হাজরা, ফুলকুমারী হাজরা বললেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অসহায় অবস্থার কথা জানাব। ভিটে-মাটি ছেড়ে এ ভাবে কত দিন থাকব? নিজেদের গ্রামে ফিরতে চাই। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব।”
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবী প্রসাদ করণম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন করে অসমের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আরও ৩৬৯ জন শরণার্থী কুমারগ্রামে এসেছেন। তাতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১১৬ জন। চ্যাংমারিতে ৩৮০ জন, মধ্য হলদিবাড়িতে ৯০ জন এবং বালাপাড়া ৩৯৪ জন এবং পূর্ব শালবাড়ি শিবিরে ২৫২ জন শরণার্থী রয়েছেন। আলিপুরদুয়ার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সমীর নার্জিনারি বলেন, “সীমান্তে আরও ২৬টি প্রাথমিক স্কুলে প্রয়োজনে শরণার্থী শিবির খোলা হবে।” তিনি জানান, এই সমস্ত স্কুলে মিড ডে মিলের যে পরিকাঠামো রয়েছে, সেখান থেকেই শরণার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
শুক্রবার কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবিরে যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। শরণার্থীদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন তিনি। গিয়েছিলেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতারাও। কালচিনি ব্লকের আদিবাসী নেতা ত্রিয়ফিল সোরেন বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসারও চেষ্টা করছি।”
অসমে হত্যালীলার প্রতিবাদে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ-সহ কয়েকটি সংগঠন আজ, শনিবার তরাই ও ডুয়ার্সে বন্ধের ডাক দিয়েছে। তাই যানবাহন অচল হওয়ার সম্ভাবনা। চা বাগানও বন্ধ থাকতে পারে। তবে আদিবাসীদের একটি সংগঠনের নেতা জন বার্লা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা তো চেয়েছিলাম, উনি এসে শরণার্থীদের দেখে যান। শরণার্থী শিবিরে যাঁরা যাবেন, তাঁদের কাউকেই আটকানোর প্রশ্নই ওঠে না।” আবহাওয়া ঠিক থাকলে নাগরাকাটা ইউরোপিয়ান ক্লাবের মাঠের হেলিপ্যাড থেকে কপ্টারে কুমারগ্রামে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী।