শপথ নিচ্ছেন নীতীশ কুমার। শুক্রবার পটনায়। ছবি: পিটিআই।
শপথ গ্রহণ শেষ হয়েছে ঘণ্টা চারেক আগে। শপথে আসা ভিভিআইপিদের প্রায় সকলেই পটনা ছেড়েছেন। ১ অ্যানে মার্গের বাইরে সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের ভিড়টা অবশ্য নড়েনি। এমন সময়ে স্পেশ্যাল ব্র্যাঞ্চের এক জওয়ান এসে বললেন, ‘‘সাহেব আপনাদের ডাকছেন।’’ হুড়মুড়িয়ে ঢোকা গেল অ্যানে মার্গের অন্দরে। সিংহাসনের মতো একটা চেয়ারে বসে তিনি। সঙ্গে কয়েক জন আমলা এবং মন্ত্রী। সাংবাদিকেরা এসে পড়ায় তাঁরা উঠে পড়লেন। চিত্রগ্রাহকেরা ছবি তোলা শুরু করতেই হাত তুলে থামিয়ে দিলেন। দিনভরের ক্লান্তির ছাপ চোখেমুখে। কার্যত বিধ্বস্ত। সেই অবস্থাতেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সবাইকে চমকে দিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘আজ আর ছবি নয়। সেলফি হয়ে যাক আপনাদের সঙ্গে!’’
একরাশ মুগ্ধতা সবার চোখেমুখে। শুরু হল হুড়োহুড়িও। অনেক ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকই নিজস্বী তুললেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। আর তখনই ধরা পড়ল। আপাত শান্ত চোখমুখেও কোথাও যেন একটা ঝড় বইছে। স্পষ্ট, খুব চাপে নীতীশ।
পড়ুন: কঠিন সময়ে তেজ দেখিয়েই উঁচু পদে তেজস্বী
কিন্তু কেন? কোনও রাখঢাক না রেখেই তো এ দিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা জম্মু-কাশ্মীরের নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে পারেন নীতীশ কুমার। দিল্লির জন্য তাঁর তৈরি হওয়া উচিত।’’ তার পরেও এত চাপ কেন? দিল্লির কথা ভেবে? নাকি আগামী দিনে বিহারে সরকার চালানোর সমস্যার কথা ভেবে?
সকলেই মানছেন, সমস্যাটা কম নয়! এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অঘোষিত লড়াই। অন্য দিকে, সরকারের অন্যতম শরিক হিসেবে লালু এবং মন্ত্রিসভায় তাঁর দুই ছেলে! দু’দিক সামলে কী ভাবে এগোবেন?
সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভা তৈরি নিয়ে গত কাল গভীর রাত পর্যন্ত সমস্যা ছিল। বেসি রাতে লালুর বাড়ি যান নীতীশের দুই বিশ্বস্ত সৈনিক প্রশান্ত কিশোর এবং বিজয়কুমার চৌধরি। পারিবারিক ভারসাম্যের কারণে দুই ছেলেকেই মন্ত্রী করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন লালু। এ ছাড়া লালু শিবির ছেড়ে তাঁর দিকে আসা শ্যাম রজককে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া যায়নি। বাদ দিতে হয়েছে পি কে শাহি, বিমা ভারতী-র মতো বেশ কয়েক জনকে। এ দিন একাধিক জেডিইউ বিধায়ক শপথ অনুষ্ঠানে যানইনি! তাঁদের মান ভাঙানোর চেষ্টা হলেও তাতে কতটা কাজ হয়েছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে নীতশের। তা ছাড়া পূর্ত, অর্থ, স্বাস্থ্য, পর্যটন, পরিবহণ, সমবায় এবং কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী লালুর লোকেরা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হবে। ১০ সার্কুলার রোড থেকে বসে লালু যে সমান্তরাল সরকার চালাবেন, তা-ও অনেকটা স্পষ্ট। এতেই কপালে ভাঁজ বাড়ছে নীতীশের।
পড়ুন: শপথে আবেগে ভাসল গাঁধী ময়দান
জেডিইউ নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের হাল সহজে লালুর হাতে ছাড়বেন না নীতীশ। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের দেখভাল ও কো-অর্ডিনেশনের দায়িত্ব প্রশান্ত কিশোরকে দিতে চাইছেন তিনি। যাতে সরকার ‘ন্যায়ের সঙ্গে বিকাশ’ করতে পারে। পাশাপাশি লক্ষ্য দিল্লি। মোদী-বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে ওঠা। তবে সেই পথ যে খুব সোজা নয়, তা ভালই বোঝেন তিনি। তাই সময় নষ্ট না করে এখন ভারসাম্যের নয়া সমীকরণে হাঁটতে চাইছেন নীতীশ।