বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ে সংসদে ধর্মান্তরণ-বিরোধী বিল আনার প্রস্তাব দিল কেন্দ্র।
আগরার এক বস্তিতে ধর্মান্তরণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে আরএসএসের শাখা সংগঠনের দিকে। সূত্রের খবর, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। আজ সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তা-ও বিরোধীদের আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খান তিনি। উপরন্তু বেঙ্কাইয়া আজ লোকসভায় বলেন, “আমি যে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তার জন্য আমি গর্বিত।’’ তাতে আগুনে ঘি পড়েছে। তৎক্ষণাৎ ওয়াকআউট করেছেন বিরোধীদের একাংশ।
ফলে টিম-মোদীর অস্বস্তি বেড়েছে বই কমেনি। বিজেপি সূত্রের খবর, ক্ষমতায় আসার পরেই আরএসএস এবং অন্য সংগঠনগুলিকে ধর্ম সংক্রান্ত বিষয় নাড়াচাড়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মোদী। সেই বার্তার প্রতিফলন পড়েছিল লখনউয়ের আরএসএস সম্মেলনে। কিন্তু এখন বিজেপি নেতারাই মেনে নিচ্ছেন, ধর্মান্তরণ-কাণ্ডে দল এবং সরকারের মুখ পুড়েছে। এবং তা এমন একটি সময়ে, যখন ভোট চলছে জম্মু ও কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে। এই ভোটের তাৎপর্য অপরিসীম।
কেন? বিজেপির এক নেতা ব্যাখ্যা দিলেন, জঙ্গি হানা উপেক্ষা করে সদ্য কাশ্মীরে সভা করে এসেছেন মোদী। তিনি চাইছেন উপত্যকায় ধর্মীয় উদারনীতি ও উন্নয়নের বার্তা দিতে। কাশ্মীরবাসীও ঢালাও ভোট দিচ্ছেন। এই সময়ে ধর্মান্তরণের মতো বিষয় জড়ালে ভোটের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই বিজেপি নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আগরার ঘটনায় তাঁদের দলের কোনও সমর্থন থাকতে পারে না। যদিও বিরোধীদের দাবি, মোদীর আসল লক্ষ্য দিল্লির ভোট। তা মাথায় রেখেই ধর্মান্তরণে মদত দিচ্ছে তাঁর সরকার।
আজ, আগরা-কাণ্ড নিয়ে ফের সংসদে বিক্ষোভ শুরু করেন বিরোধীরা। চলে তুমুল বাক্বিতণ্ডা। সেই দলে তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, আপ, বিএসপি সব পক্ষই ছিল। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, “এটা দেশের ঐক্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।” খড়গেকে পাল্টা জবাব দিয়ে বেঙ্কাইয়া তখন বলেন, “দেশের সুরক্ষা এবং ঐক্য নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। অকারণে বিষয়টিকে রাজনীতির রং দেওয়া হচ্ছে।”
বিরোধীরা চাইলে ধর্মান্তরণ নিয়ে আলোচনা করতে তাঁরা রাজি বলে জানিয়ে বেঙ্কাইয়া বলেন, “সর্বসম্মত ভাবে আমরা ধর্মান্তরণ-বিরোধী বিলও পাশ করাতে চাই। গাঁধীজিও সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।” সেই প্রস্তাবও অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। তাঁর অভিযোগ, ওই বিল আনা হলে দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে। অন্য দিকে, এক বিজেপি নেতা বলেন, “নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করা কংগ্রেস, বাম বা তৃণমূলের মতো দলগুলিই রাজনৈতিক কারণে এই বিলের বিরোধিতা করবে।” তাঁর ব্যাখ্যা, বিরোধীরা স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই আরএসএসের নাম জড়াচ্ছে। বেঙ্কাইয়া নিজেই বলেছেন, “আরএসএস শৃঙ্খলাবদ্ধ সংগঠন। আরএসএস নাম লিখিয়েছিলাম বলেই আজ এত দূর এসেছি।”
তবে মুখে এ কথা বললেও বেঙ্কাইয়া যে ভাবে আগরার ঘটনার সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, তা প্রকট। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, “কেন্দ্র কেন এর জন্য দায়ী হবে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গোটা বিষয়টি নজর করছে। ওই এলাকায় শান্তিও বজায় রয়েছে।”
বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, যে ভাবে উপজাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের কাজ করার নামে বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়া চালিয়ে এসেছে, তা আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। বিজেপি সেই প্রক্রিয়া রুখতে চায়। তাই ধর্মান্তরণ বিরোধী বিলের প্রস্তাবনা। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে ইতিমধ্যেই ধর্মান্তরণ বিরোধী বিল পাশ করানো হয়েছে। সূত্রটির মতে, ভারতের মতো দেশে ধর্মান্তরণ সহজ নয়। দল তা সমর্থনও করছে না। না-খেতে পাওয়া মানুষরাও ধর্ম পরিবর্তনে সম্মতি দেবেন না।