তোমরা যখন এই চিঠি পড়বে, তখন আমি আর থাকব না

যখন এই চিঠি তোমরা পড়বে তখন আমি আর থাকব না। আমার উপর রাগ কোরো না, আমি জানি তোমাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে সত্যি ভালবাসো। আসলে সমস্যাটা আমার নিজেকে নিয়ে। অনুভব করছি আমার আত্মা এবং শরীরের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

রোহিত

যখন এই চিঠি তোমরা পড়বে তখন আমি আর থাকব না। আমার উপর রাগ কোরো না, আমি জানি তোমাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে সত্যি ভালবাসো। আসলে সমস্যাটা আমার নিজেকে নিয়ে। অনুভব করছি আমার আত্মা এবং শরীরের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। এবং আমি একটি দৈত্যে পরিণত হয়েছি। আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক, কার্ল সাগানের মতো। শেষ পর্যন্ত, এই একটা চিঠি লেখার সুযোগ পেয়েছি।

Advertisement

আমি ভালবাসতাম বিজ্ঞান, নক্ষত্র, প্রকৃতি। কিন্তু তার পরে আমি মানুষকে ভালবেসেছিলাম, এটা না জেনেই যে তারা বহু বছর আগেই প্রকৃতি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আমাদের অনুভূতিগুলো সব নকল। আমাদের ভালবাসা মেকি। আমাদের বিশ্বাসগুলো রং মেশানো।

এক জন মানুষের মূল্য এখন গিয়ে ঠেকেছে তাঁর পারিবারিক পরিচয়ে, ভোটে, একটা নম্বরে, একটা বস্তুতে। কাউকে তাঁর মন দিয়ে বিচার করা হয় না। ভেবে দেখা হয় না যে, তিনি নক্ষত্রের ধুলো দিয়ে তৈরি এক পরমাশ্চর্য সৃষ্টি।

Advertisement

আমি এই ধরনের চিঠি প্রথম বার লিখছি। যদি ঠিক করে বুঝিয়ে লিখতে না পারি তা হলে আমায় ক্ষমা কোরো।

হয়তো গোটা ব্যাপারটা বুঝতে আমিই প্রথম থেকে ভুল করেছি। ভালবাসা, ব্যথা, জীবন, মৃত্যু সব বুঝতে ভুল করেছি। কিছু মানুষের জন্য গোটা জীবনটাই একটা অভিশাপ। আমার জন্মটা ছিল নেহাতই দুর্ঘটনা। ছেলেবেলার সেই একাকিত্ব এখনও কাটাতে পারিনি।

এই মুহূর্তে যে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি তা নয়। আমি শুধুই নিঃস্ব। নিজের সম্পর্কে কোনও ভাবনা নেই। এটা ভয়ঙ্কর। আর তাই আমি এটা করছি।

আমার মৃত্যুর পরে অনেকে আমাকে কাপুরুষ বলতে পারেন। এবং স্বার্থপর অথবা বোকা। কিন্তু তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। মৃত্যুর পরের গল্পগুজব, ভূত বা প্রেতাত্মা— কোনও কিছুতেই আমি বিশ্বাস করি না। যদি কিছুতে বিশ্বাস করে থাকি, তা হল আমি নক্ষত্রগুলোয় ঘুরতে যেতে পারব।

যদি এই চিঠিটা পড়ে কেউ আমার জন্য কিছু করতে চাও, তা হলে সাত মাসের ফেলোশিপ বাবদ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পাই, সেই টাকাটা নিয়ে আমার পরিবারকে দিও। রামজি আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান। তাঁকে ওই টাকাটা ফেরত দিও।

আমার জন্য কান্নাকাটি কোরো না। জেনো, বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গিয়ে আমি ভাল আছি। ‘‘ছায়া থেকে তারার পথে।’’ উমা আন্না, এই কাজের জন্য তোমার ঘর ব্যবহার করছি বলে দুঃখিত।

শেষ বারের জন্য, জয় ভীম কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লিখতে ভুলে গিয়েছি। আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়। এটা আমার সিদ্ধান্ত, এবং এর জন্য একমাত্র আমি দায়ী। আমি চলে যাওয়ার পরে আমার বন্ধু এবং শত্রুদের যেন বিরক্ত করা না হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement