জমি বিল নিয়ে যে এতটুকু জমি ছাড়বেন না, গত কালই তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিলটি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করে দিতে আজ তিনি ধার বাড়ালেন পাল্টা প্রচারের। গত জুন মাসে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বৈঠকে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের অনেক মুখ্যমন্ত্রীও যে জমি বিলের প্রস্তাবগুলির পক্ষে সায় দিয়েছিলেন সেই তথ্য সামনে নিয়ে এলেন। একইসঙ্গে সরকার জানাল, কৃষকদের জমিতে তৈরি প্রকল্পে তাঁদের অংশীদার করে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতেও রাজি আছে সরকার।
বিরোধীদের এককাট্টা আক্রমণ মোকাবিলায় গত কালই মোদী পাল্টা প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সাংসদদের। মানুষকে বোঝাতে বলেছেন, জমি বিলে আদৌ কৃষকদের স্বার্থ লঘু করা হয়নি। এনডিএ-র শরিক নেতাদের কাছেও বিলটির বিভিন্ন দিক সবিস্তার ব্যাখ্যা করা হয় কাল রাতে। কিন্তু মোদীর কাছে এটা স্পষ্ট, বিলের খুঁটিনাটি নিয়ে বিতর্কে ঢুকতে চাইছে না কংগ্রেস। কারণ, সাধারণ মানুষকে সে সব চটজলদি বুঝিয়ে ওঠা শক্ত। তাদের মূল লক্ষ্য, লাগাতার রাজনৈতিক প্রচার চালিয়ে মোদীকে কৃষকবিরোধী তকমা দেওয়া।
রাজনৈতিক ভাবেই এই প্রচারের জবাব দিতে হবে বুঝে মোদী আজ সকালে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ী, বেঙ্কাইয়া নাইডুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গডকড়ীকে নির্দেশ দেন, গত বছর ওই মন্ত্রকের বৈঠকে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরাও যে জমি বিলের প্রস্তাবগুলিতে সায় দিয়েছিলেন, সেই তথ্য তুলে ধরতে। তাতেই বিরোধীদের মুখোশ খুলে দেওয়া যাবে। প্রমাণ হবে, স্রেফ বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করা হচ্ছে জমি বিলের।
মোদীর এই নির্দেশ পেয়ে গডকড়ী সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, গত বছর জুন মাসে সব রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে যা-যা আলোচনা হয়েছিল, সে সব সামনে নিয়ে আসেন। তাতে দেখা যায়, কংগ্রেস-শাসিত কর্নাটক, কেরলের মতো রাজ্য জানিয়েছিল ছোট প্রকল্পে সামাজিক নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধু বড় প্রকল্পেই তা সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। নয়তো কোনও উন্নয়নই সম্ভব নয়। গরিব ও কৃষকদের স্বার্থে সেচ প্রকল্প বা গ্রামে রাস্তা-স্কুল-হাসপাতাল গড়ার জন্যও জমি চাই। ২০১১ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশকে লেখা মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বানের চিঠিও প্রকাশ করা হয়। গডকড়ীর দাবি, “সরকার আজ যে কথা বলছে, ঠিক সেটিই গত জুনের বৈঠকে বলেছেন অনেক মুখ্যমন্ত্রী। এখনও অনেক অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে বলছেন, বিলে কোনও হেরফের না করতে। তাহলে উন্নয়ন থমকে যাবে।”
তবে গডকড়ী এ-ও জানান, কৃষকদের স্বার্থে বিরোধীরা সদর্থক প্রস্তাব দিলে সরকার এখনও তা বিবেচনা করতে প্রস্তুত। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের জমিতে তৈরি হওয়া প্রকল্পে অংশীদারি ও নগদ দেওয়ার কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এর সঙ্গেই গডকড়ীর প্রশ্ন, “কেন্দ্রের বিলের পরেও যাবতীয় অধিকার যখন রাজ্যের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তবে এত হল্লা কেন?”
এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেন, কোনও আইন প্রঁণয়নের পর তার রূপায়ণের সময় কিছু ব্যবহারিক সমস্যা হয়। এবং তা হয় বলেই সংবিধান প্রণয়নের পর একশো বারের বেশি সংশোধন হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস ও অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কিছু ব্যবহারিক সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তাঁরা কখনও জমি আইন থেকে তাঁর আত্মাকে বের করে ফেলে দিতে বলেননি। মোদী সেটাই করছেন।
গত ক’দিন ধরেই কংগ্রেস বলে আসছে, কর্পোরেট সংস্থার হাতে তামাক খেয়ে সরকার গায়ের জোড়ে কৃষকদের জমি কেড়ে নিতে চাইছে। কৃষকদের মতের কোনও গুরুত্ব নেই মোদীর কাছে। তুলনায় আদানি-অম্বানী এবং ঠিকাদারদের মত গুরুত্ব পাচ্ছে। বিলের খুঁটিনাটি এড়িয়ে আজও জয়রাম মূলত রাজনৈতিক আক্রমণই শানান। তবে সংসদে বিল নিয়ে চুলচেরা বিতর্কের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে জয়রামদের বক্তব্য, সরকার ৫টি ক্ষেত্রের নামে আসলে বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছে। এ ব্যাপারে বহু-ফসলি উর্বর জমিকেও রেয়াত করছে না। জমি অধিগ্রহণের আগে সামাজিক প্রভাবের কোনও নীরীক্ষা করতেও কেন্দ্র রাজি নয়। তাতে বঞ্চিত হবেন খেতমজুর, ভূমিহীন কৃষক, ছোট দোকানদার সহ গরিব মানুষ। কংগ্রেসের মতে, জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ বেসরকারি শিল্প সংস্থাকে যাতে মোটা টাকা গুণতে না হয় সে জন্যই এই পথে হাঁটছে সরকার।
গত কাল বিমা বিল রাজ্যসভা থেকে প্রত্যাহার করার সময় বাধা পেয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ তিনি জানান, আগামী সপ্তাহেই লোকসভায় পেশ হবে নতুন বিমা বিল। যে ক’টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তার কোনও একটির ক্ষেত্রেই সরকার পিছু হটবে না। নিজেদের শরিক শিবসেনা, অকালি দল, লোকজনশক্তি পার্টিকে বোঝানো হচ্ছে। একই ভাবে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে বোঝানোর চেষ্টা চলবে। তবে সর্বদল বৈঠক ডাকার পক্ষপাতী নয় সরকার।