জেহাদিদের কায়দায় অসমের ৫-৬টি জায়গায় একই সময়ে হামলা চালাল এনডিএফবি (সংবিজিৎ) সংগঠনের বড়ো জঙ্গিরা। আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামে জঙ্গিদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলিতে ঝাঁঝরা হলেন আট থেকে আশির অনেকে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। পুলিশের আশঙ্কা, জঙ্গি হানায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৪৮ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। হামলার জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মানস ও নামেরি জাতীয় উদ্যান। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে সেনাবাহিনী। অসমে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত আধাসামরিক বাহিনীও।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আট জন মন্ত্রী ও পরিষদীয় সচিবকে আগামী কাল হামলার জায়গাগুলিতে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, গগৈ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। পরিস্থিতি জানতে অসমে যাবেন রাজনাথ।
গত দু’দিন ধরে সেনা, সিআরপি, রাজ্য পুলিশের ‘ইউনিফায়েড কম্যান্ড’ বড়ো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল। প্রত্যাঘাত করতে গত রাতেই কোকরাঝাড়ে গ্রেনেড হামলা চালায় এনডিএফবি জঙ্গিরা। কালকের ঘটনায় কয়েক জন আহত হলেও, কারও মৃত্যু হয়নি। আজ আবার আঘাত হানল তারা। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, এ দিন জেহাদিদের মতো প্রায় একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বড়ো জঙ্গিরা। যার ফলে প্রথম দিকে নিরাপত্তা বাহিনীও খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিল। তবে দ্রুত পরিস্থিতি সামলাতে নামে পুলিশ-প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রের খবর, আজ সন্ধেয় শোণিতপুরের বাতাসিপুর, পাভৈ, হাতিজুলি এবং কোকরাঝাড়ের পাখিরিগুড়ি, উল্টাপানি, মধুপুর, সেরফাংগুড়িতে হানা দেয় সশস্ত্র জঙ্গিরা। বাইকে চড়ে আদিবাসী গ্রামগুলিতে ঢুকে তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। মহিলা ও শিশুদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়। যাওয়ার আগে আদিবাসীদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হুমকি দেয় জঙ্গিরা। ফলে ওই এলাকাগুলিতে আদিবাসীরা দলে দলে গ্রাম ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন।
শোণিতপুরের এসপি সংযুক্তা পরাশর জানিয়েছেন, পাখিরিগুড়িতেই প্রথম হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেখানে মৃত্যু হয় সোনাই মুর্মূ (১০), সুনিতা হালদার (১৬), মরিয়ম মুর্মূ (৪৫) এবং মুন্নি বেসরার (২৭)। আহত হন কয়েক জন। অসমর্থিত সূত্রে খবর, শোণিতপুরের মৈতালুবস্তিতেও হানা দিয়েছে জঙ্গিরা। সেখানেও অনেকে হতাহত হয়েছেন। প্রত্যন্ত ওই সব এলাকার দিকে নিরাপত্তা বাহিনী রওনা দিয়েছে।
এনডিএফবি দমনে রাজ্যে ইতিমধ্যেই বিশেষ অভিযান শুরুর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। এর আগে, যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জন সংবিজিৎপন্থী জঙ্গির। সে জন্য এনডিএফবি সশস্ত্র বদলার হুমকি দিয়েছিল। আজ সকালে রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) সত্যেন্দ্রনারায়ণ সিংহ জানিয়েছিলেন, অসমে হামলার জন্য তৈরি হচ্ছে এনডিএফবি-র শ’খানেক সদস্য। ডিজি খগেন শর্মাও বড়দিনের আগে এনডিএফবি হানার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এনডিএফবি-র হুমকি উড়িয়ে দেন।
কিন্তু সেই হুমকিটাই এ বার কাজে করে দেখাল সংবিজিৎপন্থী জঙ্গিরা। পুলিশ জানায়, মানস জাতীয় উদ্যানে সংবিজিৎ গোষ্ঠীর জঙ্গিদের অবাধ গতিবিধি রয়েছে। আগে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আঁচ পড়েছিল মানসের বিভিন্ন রেঞ্জে। মানসের বিভিন্ন বন শিবিরে হানা দিয়ে ওই সংগঠনের জঙ্গিরা রাইফেল লুঠ করেছিল। তাই আজকের ঘটনার জেরে তিন দিনের জন্য মানস জাতীয় উদ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দিল্লিতে গত কাল এনডিএফবি-র সঙ্গে আলোচনায় দ্রুত সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু সেই সঙ্গে বড়োভূমিতে চলছে জঙ্গি দমন অভিযানও। চলতি বছরে সেখানে জঙ্গি হামলায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৪০ জন বড়ো জঙ্গি।