অসমে গণহত্যার পিছনে কারা তা নিয়ে ফের ধোঁয়াশা তৈরি হল। এত দিন এনডিএফবি (সংবিজিৎ) গোষ্ঠীর দিকেই আঙুল তুলেছে অসম, কেন্দ্র ও সেনাবাহিনী। কিন্তু কাল ধৃত ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর এক লিঙ্কম্যানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, গণহত্যার অন্তত একটি ঘটনার পিছনে আছে এনডিএফবি-র অন্য গোষ্ঠী। আলোচনার জন্য সেই গোষ্ঠীর নেতা রঞ্জন দৈমারিকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এনডিএফবি-র বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী কোকরাঝাড়ের সেরফাংগুড়িতে ১টি ও বিশ্বনাথ চারিয়ালিতে ৫টি জঙ্গি শিবির ধ্বংস করে। কোনও শিবিরে অস্ত্র না মিললেও সেরফাংগুড়িতে ১টি গাড়ি ও ৮টি বাইক মিলেছে। এ ছাড়া ধরা পড়েছে সুগলাই বসুমাতারি ও অনিল বসুমাতারি নামে দুই লিঙ্কম্যান। বাতাসিপুর থেকে ধৃত সুগলাই জানিয়েছে, ওদালগুড়ির রৌতার বাসিন্দা সুনীল ও মাঝবাটের বাসিন্দা মহন্ত নামে রঞ্জনপন্থী দুই জঙ্গির নেতৃত্বে ৮ জন জঙ্গি ঢেকিয়াজুলিতে আক্রমণ চালিয়েছিল। শোণিতপুরের পুলিশ সুপার সংযুক্তা পরাশর বলেন, “সুগলাইকে জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেছি। যৌথ বাহিনী সামগ্রিক ভাবেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।”
প্রত্যাশিত ভাবেই এই স্বীকারোক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছে রঞ্জন গোষ্ঠী। রঞ্জনের দিদি ও বড়ো নারী অধিকার সংগঠনের নেত্রী অঞ্জলি বসুমাতারির দাবি, পুলিশই সংবিজিৎ গোষ্ঠীকে দমন করতে রঞ্জন গোষ্ঠীর জঙ্গিদের কাজে লাগাতে চাপ দিচ্ছিল। রঞ্জন সেই চাপ না মানায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
কিন্তু রঞ্জনকেও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে রাজি নন গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, শান্তি আলোচনায় রাজি না হলে জামিন পাওয়া যাবে না বুঝেই সে পথে এগিয়েছিল রঞ্জন। কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে পুনর্বাসনের জন্য প্রাপ্য মোটা টাকা এখনও পায়নি সে। তাই নাশকতা ও তোলাবাজির লোভনীয় পথও রঞ্জন এখনই পুরোপুরি ছাড়তে রাজি নয়। কেন্দ্র বার বার সতর্ক করলেও রঞ্জনের সঙ্গীরা এখনও অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে, তোলাবাজি করছে। গোয়েন্দাদের মতে, সংবিজিৎ আলাদা গোষ্ঠী গড়ে নাশকতা করছে ঠিকই। কিন্তু দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোপন বোঝাপড়া থাকাও অসম্ভব নয়। সেই বিষয়টিও এনআইএ তদন্ত করে দেখবে। আজ কোকরাঝাড় জেলার শিমুলটাপু-দামরাপার এলাকায় এক এনডিএফবি জঙ্গি ও দুই লিঙ্কম্যান ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, ধৃত জঙ্গির নাম রদ্বীপ নার্জারি। তার বাড়ি কোকরাঝাড়ের কুসুমবিল গ্রামে। তার সঙ্গী দুই লিঙ্কম্যানের নাম রহিদাস নার্জারি ও বেনেডিক বসুমাতারি।
অসমে রাজনৈতিক দলের জঙ্গি যোগ নিয়ে চাপানউতোর অব্যাহত। বিজেপির সঙ্গে এনডিএফবি-র ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আজও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানায় কংগ্রেস। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দ্বারস্থ হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও লখিমপুরের বিজেপি সাংসদ সর্বানন্দ সোনোয়াল। পশ্চিমবঙ্গের কুমারগ্রাম ও অসমের বিভিন্ন এলাকায় শরণার্থী শিবিরগুলি ঘুরে দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
ত্রাণশিবিরে যত সমস্যাই থাক, নিরাপত্তা না পেলে গ্রামে ফিরতে রাজি নন আদিবাসী বা বড়ো- কোনও সম্প্রদায়ের শরণার্থীই। গত তিন দিনে নতুন হাঙ্গামা না হলেও শিবিরে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিতে জখম এক মাসের এক শিশু ও তার বাবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। আজ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তদারক করেন। তিনি জানান শিবিরগুলিতে আপাতত ত্রাণসামগ্রীর অভাব নেই। অসমে জঙ্গি তাণ্ডবের জেরে ত্রিপুরাতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করা হয়েছে। বিএসএফের সাহায্যে জঙ্গি দমন অভিযানও চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ।