গীতে-কে মন্ত্রী রেখে সেনাকে বার্তা মোদীর

মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মন্ত্রক বণ্টনও হল। কিন্তু শিবসেনার কাঁটা পুরোপুরি তুলে ফেলতে পারছে না বিজেপি। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধিবেশন। বুধবার আস্থা ভোট। তার আগে শিবসেনার দুই নেতাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল করে উদ্ধব ঠাকরেকে শান্ত করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাতে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু মোদীর সেই চালে মাত হলেন না উদ্ধব।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মন্ত্রক বণ্টনও হল। কিন্তু শিবসেনার কাঁটা পুরোপুরি তুলে ফেলতে পারছে না বিজেপি।

Advertisement

সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধিবেশন। বুধবার আস্থা ভোট। তার আগে শিবসেনার দুই নেতাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল করে উদ্ধব ঠাকরেকে শান্ত করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাতে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু মোদীর সেই চালে মাত হলেন না উদ্ধব। উল্টে সন্ধ্যায় বলে দিলেন, এনসিপি না শিবসেনা কাকে সঙ্গী করতে চায় বিজেপি, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট করুক তারা। না হলে মহারাষ্ট্রে বিরোধী আসনেই বসবে শিবসেনা। ভোটও দেবে বিজেপির বিপক্ষে।

সন্ধ্যায় উদ্ধবের এই হুমকির আগেও অবশ্য এক দফা নাটক হয়েছে দীর্ঘদিনের শিবসেনা নেতা সুরেশ প্রভুকে নিয়ে। প্রভুকে মন্ত্রী করার ব্যাপারে উদ্ধব আপত্তি করায় মোদী আজ তাঁকে সরাসরি বিজেপির সদস্য করে শপথ পাঠ করিয়েছেন। শিবসেনার আর এক নেতা অনিল দেশাইকে মোদী মন্ত্রী করতে চাইলেও তিনি উদ্ধবের নির্দেশে দিল্লি পর্যন্ত এসেও পরে উদ্ধবের নির্দেশে বিমানবন্দর থেকেই মুম্বই ফিরে যান! তার পরেই সন্ধ্যায় এই হুমকি। বিজেপি-শিবসেনার এই স্নায়ুর যুদ্ধে এখন মূল প্রশ্ন হল, কে প্রথম চোখের পলক ফেলবে?

Advertisement

উদ্ধব জানেন, পরশু, মঙ্গলবার বিদেশ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু উদ্ধব যদি তার মধ্যে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য অনন্ত গীতেকে ইস্তফা দিতে বলেন, তা হলে ভারী শিল্প মন্ত্রকটি নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়বেন মোদী। কারণ সদ্যই আজ মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেছেন তিনি। অঙ্ক কষে এই সময়টিতেই বিজেপির উপর চাপ দিয়ে স্নায়ুর খেলায় এগিয়ে থাকতে চাইছেন উদ্ধব। কিন্তু তাঁর এই চাপের রাজনীতির কাছে মাথা নোয়াতে নারাজ মোদী এবং অমিত শাহ। আজ মন্ত্রিসভা গঠনের আদলেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনন্ত গীতেকে সসম্মানেই মন্ত্রিসভায় রেখে দিয়ে মোদী জোট টিকিয়ে রাখার বল পাল্টা ঠেলে দিয়েছেন উদ্ধবের কোর্টে। কারণ তিনি ভালই জানেন, শিবসেনা যে শর্তই দিক, তাদের আসল কৌশল মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক আদায় করা। ফলে আপাতত দুই দলই একে অপরকে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। আবার কেউই আলোচনার পথ বন্ধ রাখছে না।

বিজেপি নেতৃত্ব জানেন শরদ পওয়ারের দলের প্রত্যক্ষ না হোক, পরোক্ষ সমর্থন নিলেও দুর্নীতির গন্ধ গায়ে মাখতে হবে। উদ্ধবরা সেই অপেক্ষাতেই আছেন। সে ক্ষেত্রে উদ্ধবকে সঙ্গে নেওয়াই শ্রেয়। কিন্তু মোদী চান, মহারাষ্ট্রে ‘বড় দাদা’ বিজেপির কথা শুনেই চলুন উদ্ধব। উপমুখ্যমন্ত্রী বা স্পিকারের মতো পদ গুরুত্বপূর্ণ পদ তাঁকে দেওয়া যাবে না। আর স্বরাষ্ট্র, অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক শিবসেনার হাতে ছাড়তে নারাজ বিজেপি। কিন্তু আজ উদ্ধব যে ভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে আগামী দু’দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শেষ পর্যন্ত যদি উদ্ধবের সঙ্গে বনিবনা না হয়? বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে তাঁরা বিকল্প পথ ভেবে রেখেছেন। তা হল, আস্থা ভোটে পওয়ারের দলকে গরহাজির রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করবে বিজেপি। একবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ হলে পরের ছ’মাসে কেউ অনাস্থা আনতে পারবে না। সেই সময়ের মধ্যে শিবসেনা বা পওয়ারের দল থেকে আরও জনা দশেক বিধায়ককে টেনে বিজেপির টিকিটে উপনির্বাচনে জিতিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। যাতে মহারাষ্ট্রে বিজেপি একার জোরেই সরকার গড়তে পারে। কিন্তু সেই কৌশলে ভাবমূর্তি খোয়ানোর ঝুঁকি আছে। এই বিষয়টা মাথায় রেখেই দিল্লিতে আম আদমি পার্টির বিধায়কদের দলে টানার ব্যাপারে কিছুটা এগিয়েও পরে পিছিয়ে আসেন বিজেপি নেতৃত্ব। আসলে মোদী জমানায় বিজেপি অন্য দল ভাঙানোর কৌশল নেবে, না কি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে, আগামী কয়েক ঘণ্টায় তা স্পষ্ট হবে।

মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের আগে আসন সমঝোতা না হওয়ায় বিজেপি সিদ্ধান্ত নেয়, ওই রাজ্যে একলা লড়বে দল। বিজেপি শিবির বলছে, দলের ভার এখন নতুন প্রজন্মের হাতে। বাজপেয়ী-আডবাণীরা যে ভাবে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন এখন তা বদলেছে। জয়ললিতা বা বাল ঠাকরের মতো শরিক নেতাদের যে ভাবে বিজেপি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে, এখন তা অতীত। মোদী-অমিত শাহের মূল বক্তব্য, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে দলের। তাই কোনও শরিক দলের কাছে মাথা নত করবে না বিজেপি।

সাম্প্রতিক টানাপড়েনের সূত্রপাত গতকাল রাতে। চলতি মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে শিবসেনার অনিল দেশাইকে মন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। তবে প্রতিমন্ত্রী। উদ্ধবের দাবি ছিল, দেশাইকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে পূর্ণমন্ত্রী করতে হবে। দলের ওই দাবি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতেই মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চান শিবসেনার তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত গীতে। কিন্তু গীতেকে কার্যত এড়িয়ে যান মোদী।

তার পরেই চাপ বাড়ানোর কৌশল নেন উদ্ধব। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া চা-চক্রে দেশাইকে যেতে বারণ করে দেন তিনি। একই সঙ্গে অবশ্য এক পা এগিয়ে থাকার বার্তা দিতে দেশাইকে দিল্লি উড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন উদ্ধব। কিন্তু তাঁর কড়া নির্দেশ ছিল, দেশাই যেন দিল্লি বিমানবন্দর থেকে না বার হন। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন উদ্ধব। উদ্দেশ্য, দেশাইয়ের পূর্ণমন্ত্রীর পদ নিশ্চিত করা। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। শিবসেনা সূত্রের খবর, একাধিক বার চেষ্টার পর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়, মোদী বিজ্ঞান ভবনে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে রয়েছেন। সেখান থেকে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ফলে তাঁর পক্ষে উদ্ধবের সঙ্গে এই মুহূর্তে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। বার্তা স্পষ্ট। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিজের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে কোনও শরিক দলের অনুরোধ বা পরামর্শ শুনতে রাজি নন। এর পরেই দেশাইকে দিল্লি বিমানবন্দর থেকেই মুম্বই ফেরার নির্দেশ দেন উদ্ধব। তার পরে রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement