ভোটে লড়তে কোমর বেঁধে তৈরি অনেক তারকাই। কিন্তু তাঁদের একটা বড় অংশই ‘হাত’-এর ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলছেন। কারণটা বোঝাও কঠিন নয় হাওয়া খারাপ কংগ্রেসের।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দিল্লি, হরিয়ানা ও পঞ্জাব থেকে তিন তারকা ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহ ও হরভজন সিংহকে এ বার হাত চিহ্নে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সবিনয় ফিরিয়ে দিয়েছেন তিন জনই। গুড়গাঁওয়ে অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরকে টিকিট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েও বিশেষ সাড়া পায়নি কংগ্রেস। প্রস্তাব পেয়ে উদাসীন অভিনেতা অক্ষয় কুমারও। হরিয়ানার কোনও আসনে দাঁড়ানোর জন্য আর এক অভিনেত্রী মহিমা চৌধরিকে প্রস্তাব দিয়েছিল কংগ্রেস। মহিমা প্রার্থী হতে তৈরি, তবে কংগ্রেসের টিকিটে নয়। বিজেপির কাছে তিনি আসন চেয়ে দরবার করছেন। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে স্থানীয় নেতাদেরই প্রার্থী বাছতে হচ্ছে রাহুল গাঁধীকে।
মজার বিষয় হল, তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে বিনোদন ও ক্রীড়া জগতের তারকাদের প্রার্থী করায় সমালোচনায় মেতেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। অনেকে এ প্রশ্নও তুলেছেন, এঁরা ভোটে জিতলে স্থানীয় মানুষের কোন উপকার হবে? অথচ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারাই কিন্তু প্রার্থী করার জন্য হন্যে হয়ে তারকা খুঁজে ফিরছেন।
কিন্তু কেন এই খোঁজ?
কংগ্রেস সূত্র বলছে, দিল্লিতে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তায় কতটা ভাটা পড়েছে তা সম্প্রতি বিধানসভা ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের মুখ আর দেখতে চাইছেন না মানুষ। একই ভাবে হরিয়ানায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে। পঞ্জাবেও কংগ্রেস এখন বেশ দুর্বল। অথচ এই তিন রাজ্যে গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস হইহই করে জিতেছিল। গত বার পঞ্জাবে ১৩টি আসনের আটটিই জিতেছিল কংগ্রেস। হরিয়ানায় দশে দশ ও দিল্লিতে সাতে সাত। কিন্তু কংগ্রেসের একদা উর্বর জমিতেই এ বার খরার পূর্বাভাস রয়েছে। মূলত সে কারণেই কিছু তারকা-মুখ নামিয়ে শেষ বেলায় কিছু বাড়তি ভোট কুড়োনোর কৌশল নিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, উত্তর-পশ্চিম দিল্লি থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বীরেন্দ্র সহবাগকে। সহবাগের ভগ্নীপতি কংগ্রেসের স্থানীয় কাউন্সিলর। তাঁর মাধ্যমেই সহবাগের কাছে বার্তা পাঠান এআইসিসি-র তরফে দিল্লি, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের দায়িত্বে থাকা নেতা শাকিল অহমেদ। কিন্তু সহবাগ তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত আইপিএল-এর ময়দান কাঁপানোটাই তাঁর লক্ষ্য। ভোটের ময়দান তাঁর নজরের বাইরে।
চণ্ডীগড় থেকে হরভজন সিংহকে প্রার্থী করার কথা ভেবেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কেন না স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশলের বিরুদ্ধে রেল ঘুষ কাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। পবনের বিরুদ্ধে সিবিআই কোনও চার্জশিট পেশ না-করলেও স্বচ্ছতার বার্তা দিতে হরভজনকে সেখানে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু হরভজনের উদাসীনতার দুসরায় বোল্ড হয়ে তাঁরা এখন বনসলকেই ফের সেই আসন থেকে দাঁড় করানোর কথা ভাবছেন। শাকিল অহমেদ আজ বলেন, বনশলের বিরুদ্ধে যখন চার্জশিটই হয়নি, তখন তাঁর প্রার্থী হতে বাধা কোথায়? একই ভাবে পঞ্জাবের কোনও একটি আসনে যুবরাজ সিংহকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হওয়ার আগে এ সব নিয়ে ভাবছেন না।
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টাও চলছে। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে যেমন আর প্রার্থী হতে রাজি নন কংগ্রেস সাংসদ আজহারউদ্দিন, তেমনই ফিরোজাবাদে দ্বিতীয় বার প্রার্থী হতে চাইছেন না রাজ বব্বরও। আর সেই খবর পাওয়া মাত্রই পঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লি এই তিন রাজ্যের কংগ্রেস নেতারাই জোর টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন রাজ বব্বরকে নিয়ে। নয় নয় করে অন্তত ১০টি আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছেন রাজ বব্বর। সেই তুলনায় অবশ্য আজহারের চাহিদা একটু কম। রাজস্থানই হোক বা হরিয়ানা, মোরাদাবাদের বদলে কোথাও একটা আসন পেলেই তিনি খুশি।
দিল্লি-পঞ্জাব-হরিয়ানার একপ্রস্ত প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। বাকি আসনগুলিতে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য আজ কংগ্রেস নির্বাচন কমিটির বৈঠক বসে। ওই বৈঠকের পর কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, স্থানীয় নেতাদেরই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার শুধু যে মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্য়ের মতো পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ নেতারাই ভোটে লড়তে চাইছেন না, তা নয়। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারিও তাঁর নিজের কেন্দ্র লুধিয়ানা থেকে এ বার আর লড়তে চাইছিলেন না। তাঁর নজর ছিল চণ্ডীগড়ে। নেতৃত্বকে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, চণ্ডীগড় না পেলে ভোটেই লড়বেন না। কিন্তু আজ মণীশও সুর নরম করেছেন। রাহুলের নির্দেশে সম্ভবত তাঁকে লুধিয়ানা থেকেই প্রার্থী হতে হচ্ছে।
উত্তরের এই তিন রাজ্যই বা শুধু কেন, গোটা দেশেই কংগ্রেস এ বার বেশ কিছু তারকাকে প্রার্থী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। একেবারেই যে সাফল্য আসেনি তা-ও নয়। উত্তরপ্রদেশের ফুলপুরে ক্রিকেটার মহম্মদ কাইফ এবং জৌনপুরে ভোজপুরী অভিনেতা রবি কিষাণকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। ওড়িয়া অভিনেত্রী অপরাজিতা মহান্তিকেও কটকে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু উত্তর ভারতের তিন রাজ্যে তারকা প্রার্থী খুঁজতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। তুলনায় বরং এগিয়ে রয়েছেন অন্যরা। সূত্রের খবর, অভিনেতা সানি দেওলকে পঞ্জাবে প্রার্থী করতে পারে অকালি দল। আবার অভিনেত্রী গুল পনাগ আম আদমি পার্টির টিকিটে লড়তে পারেন চণ্ডীগড়ে।
তবে শেষ খবর, চেষ্টা এখনও থামাননি শাকিল অহমেদরা। উদাসীন তারকাদের বোঝানোর পর্ব চলছে। এঁদের কেউ কেউ মত পাল্টাতে পারেন, সেই আশাই এখন খড়কুটো দিল্লি-পঞ্জাব-হরিয়ানার কংগ্রেস নেতাদের।