মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের সময় ভারতে জঙ্গি হামলা হলে ফল ভুগতে হবে বলে পাকিস্তানকে গতকালই সতর্ক করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তাতেও ভারত-পাক সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা কমবে এমন আশা করছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা। উল্টে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তা বাড়তে পারে বলেই সন্দেহ কেন্দ্রের। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ভারত-পাক সীমান্তে আরও ১০ কোম্পানি বিসএসএফ জওয়ান মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
ভারতীয় ও মার্কিন গোয়েন্দারা এক যোগে ওবামা সফরের সময়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছেন। সীমান্তে হতে পারে জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টাও। মার্কিন গোয়েন্দাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন সাফ জানিয়েছে, ওবামার সফরের সময়ে ভারতে কোনও জঙ্গি হামলা হলে ফল ভুগতে হবে পাকিস্তানকে। আমেরিকার তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও নিশ্চিত হতে পারছেন না মোদী সরকারের শীর্ষ কর্তারা। তাঁদের মতে, নওয়াজ শরিফ সরকার পাকিস্তানের সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে না। আইএসআই ও পাক সেনার একাংশের সঙ্গে লস্কর, জইশের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগ গভীর। মার্কিন হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও পাকিস্তানের এই শক্তিগুলি অ্যাডভেঞ্চারে নামতে পারে। বিশেষ করে যেখানে ভারত বা পাকিস্তানে যে কোনও প্রথম সারির বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সফরের সময়ে কাশ্মীর সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় আইএসআই। তাই ওবামার সফরের সময়ে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে পাক বাহিনী। ভারতে নাশকতা চালাতে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদতও দিতে পারে আইএসআই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করার লক্ষ্যে কয়েকশো জঙ্গি অপেক্ষা করে রয়েছে। যাদের মদত দিচ্ছে পাক সেনা। ওই অনুপ্রবেশ করাতে গিয়ে গত কয়েক মাসে বারবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করছেন পাক রেঞ্জার্সরা। চলতি সপ্তাহে ওই হামলার তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে নয়াদিল্লির। তাই আগেভাগেই জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে অতিরিক্ত ১০ কোম্পানি বিএসএফ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ওবামার সফরের সময়ে পালাম বিমানবন্দরে সাড়ে পাঁচ হাজার অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করতে চলেছে সিআইএসএফ। দিল্লি পুলিশকে সাহায্য করতেও ১০ কোম্পানি জওয়ান পাঠাচ্ছে তারা। দিল্লি মেট্রোতেও অতিরিক্ত ৪ কোম্পানি সিআইএসএফ মোতায়েন করা হবে।
এ দিকে ওবামার নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির টানাপড়েন এখনও অব্যাহত। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিজস্ব ক্যাডিলাক ‘বিস্ট’-এই ওবামাকে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আনতে এখনও বদ্ধপরিকর মার্কিন গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। কিন্তু রীতি মেনে তাঁকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লিমুজিনে ওঠানোর জন্য এখনও চাপ দিচ্ছে নয়াদিল্লি। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের সময় কাটছাঁট করারও পক্ষপাতী ওয়াশিংটন। তাতে রাজি নয় মোদী সরকার। প্রায় দু’ঘণ্টা খোলা জায়গায় বসে থাকতে হবে ওবামাকে। তা নিয়েই আপত্তি রয়েছে মার্কিন গোয়েন্দাদের। এর আগে পৌনে এক ঘণ্টা এ ভাবে খোলা জায়গায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুষ্ঠান দেখার নজির রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সময়টি দ্বিগুণেরও বেশি। তাই মোদী, ওবামা ও প্রণববাবুর বসার জন্য একটি বিশেষ বুলেটপ্রুফ চৌহদ্দির ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে দর্শকদের অন্যতম আর্কষণ হল বিমানবাহিনীর মহড়া। যা অনুষ্ঠানের একেবারে শেষে হয়ে থাকে। কিন্তু ওবামার নিরাপত্তার খাতিরে তাও বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিল মার্কিন গোয়েন্দারা। যদিও সেই অনুরোধ সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে ওবামার সুরক্ষার জন্য গোটা দিল্লিতে ১৫ হাজার সিসিটিভি লাগিয়েছে দিল্লি পুলিশ। রাজপথে, যেখানে কুচকাওয়াজ হবে সেই তিন কিলোমিটার রাস্তায় ১৬৫টি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। অনুষ্ঠানের সময়ে রাজপথের দু’পাশে বাড়ির ছাদে কেবল মার্কিন স্নাইপার মোতায়েনের প্রস্তাব মানেনি দিল্লি। নিরাপত্তার স্বার্থে রাজপথ সংলগ্ন একাধিক মেট্রো স্টেশনে মোতায়েন থাকবেন মার্কিন নিরাপত্তারক্ষীরা। অনুষ্ঠানের দিন বন্ধ রাখা হবে মেট্রো চলাচল।
পরের দিন, ২৭ জানুয়ারি আগরা যাওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। ফলে, তার দু’দিন আগে থেকেই দর্শনার্থীদের জন্য তাজমহল বন্ধ রাখা হোক বলে সুপারিশ করেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে দিল্লি-আগরা রুটে যান চলাচলও।
লকভিকে নিয়ে যৌথ অনুরোধ
মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী জাকিউর রহমান লকভিকে ভারতের হাতে তুলে দিতে পাকিস্তানকে অনুরোধ করল আমেরিকা ও ব্রিটেন। পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, লকভিকে ভারতে প্রত্যর্পণ করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো হবে। তা না হলে নিরপেক্ষ বিচারের জন্য লকভিকে ব্রিটেন বা আমেরিকাতেও পাঠানো যেতে পারে। কারণ, মুম্বই হামলায় নানা দেশের নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে লকভির জামিনের শুনানির সময়ে এই অনুরোধের কথা উল্লেখ করেছেন সরকারি কৌঁসুলিও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের ঠিক আগে এই যৌথ অনুরোধ তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা কূটনীতিকদের।