এক বছরের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্যের রাশ নিজের হাতে রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই রণকৌশলের নকশা তৈরি করতে আরএসএস ও দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, এ জন্য সরকার ও দলকে একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। লোকসভা ভোটের সময় দলের কর্মী-সমর্থকরা যে ভাবে কাজ করেছেন, তাকেই পুঁজি করে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনগুলিতেও ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা হবে। এখন সাতটি রাজ্যে শরিকদের নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। আগামী এক বছরের মধ্যে সংখ্যাটি তিন গুণ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
দলের এক নেতার মতে, “এর ফলে চারটি দিক থেকে লাভ হবে। এক, সরকারে বসে মোদী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়নের কাজ আরও ভাল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। দুই, বিজেপি, তার শরিক এবং সম-মনোভাবাপন্ন দলগুলিকে নিয়ে শক্তিশালী জোট গড়তে পারবে। তিন, ভবিষ্যতে বিরোধীরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। চার, পরের লোকসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরে আসার ভিতও প্রস্তুত হবে।”
কী ভাবে তৈরি হচ্ছে এই পথনির্দেশিকা? এই মুহূর্তে যে সব রাজ্যে বিজেপি সরাসরি ক্ষমতায় রয়েছে, সেগুলি হল গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান ও গোয়া। এ ছাড়া শরিকদের নিয়ে আরও দু’টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তারা। পঞ্জাবে অকালিদের সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠিত হয়েছে আর অন্ধ্রে আজ চন্দ্রবাবু নায়ডুর শপথের পর সেই রাজ্যটিও তালিকায় জুড়েছে। পাশাপাশি, তামিলনাড়ুতে জয়ললিতা ও ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখে সমর্থন আদায়ের কাজটিও করছেন মোদী। এর পর বিজেপির কাছে পাখির চোখ সে সব রাজ্য, যেখানে বিরোধী দলের সরকার থাকলেও বিজেপির রাজনৈতিক জমি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। যেমন উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড ও দিল্লি। দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনই জিতেছে বিজেপি। এর পর বিধানসভার ভোট হলে সরকার গড়তে পারবে বলেই বিজেপির আশা। আর বাকি দুই রাজ্যে শাসক দল নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। ফলে সেখানেও ক্ষমতায় আসা সহজ বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এর পরে রয়েছে সেই রাজ্যগুলি, যেখানে ভোট হবে এক বছরের মধ্যে। এ বছরের শেষে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে ভোট। পরের বছর ভোট বিহার, জম্মু-কাশ্মীরে। মোদী-হাওয়ায় বিহারে দলের ভিত অনেকটাই মজবুত হয়েছে। দুর্বল হয়েছেন নীতীশ কুমার। এই অবস্থায় ভোট হলে সে রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আশার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। কাশ্মীরে এখনই ক্ষমতায় আসতে না পারলেও পিডিপির সঙ্গে জোটের রাস্তা খোলা রয়েছে। আর রয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। সাধারণত কেন্দ্রে যাদের সরকার থাকে, তাদের দিকেই ঝোঁকে এই রাজ্যগুলি। ব্যতিক্রম ত্রিপুরা। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই পূর্ণ সাংমার সঙ্গে বৈঠক করে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সমর্থন আদায়ের নকশা তৈরি করেছেন মোদী।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, এই কৌশল সফল হলে এক বছরের মধ্যে আরও ১৩টি রাজ্যের রাশ চলে আসবে বিজেপির হাতে। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন মোদী। কংগ্রেস এখন নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতের রাজনীতির সন্ধিক্ষণে এই বিষয়টিকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্যের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ ধরার চেষ্টা করলেও মোদী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মর্যাদা দিয়ে সব রাজ্যের প্রতিই সমান মনোভাব দেখাতে চান। সেখানে তিনি কোনও রকম বঞ্চনা করতে চাইছেন না।