বাজেট পেশের আর দু’সপ্তাহ বাকি। তিনি বুঝতে পারছেন দিল্লিতে দলের ভরাডুবির জেরে আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়া আটকাতে একজোট হয়ে নেমে পড়তে চাইছে বিরোধীরা। এমনকী নিজের দল কিংবা সঙ্ঘের ভিতরেও উঠছে নানা প্রশ্ন। এই জটিলতার ভিতরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ দিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকার কোনও ভাবেই আর্থিক সংস্কারের পথ থেকে সরে আসবে না।
সরকারের এই মনোভাবের কথা বোঝাতে পুণেতে একটি মার্কিন শিল্প সংস্থার অনুষ্ঠানকে বেছে নিয়েছিলেন মোদী। সেখানে তাঁর ব্যাখ্যা, বিশ্ব জুড়ে প্রতিযোগিতার মধ্যে সারা পৃথিবীর শিল্পপতিরা ভারতে মেধার খোঁজ পেতে পারেন, যা তাঁদের অনেক সাহায্য করতে পারবে। শিল্পপতিদের ভারতে আসার আর্জি জানিয়ে মোদীর মন্তব্য, “আপনাদের বিকাশ হলে আমাদেরও বিকাশ হবে।” এনডিএ সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সাধারণ বাজেট পেশ করতে চলেছে। শিল্প ক্ষেত্রের অনেকেরই আশঙ্কা, আর্থিক সংস্কারের পথ থেকে সরে এসে এ বার জনমোহনী ঘোষণার দিকে ঝুঁকবে নাকি মোদী সরকার। সেই প্রশ্নের জবাব আজ দিয়ে দিয়েছেন মোদী।
তবে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সামনে বার্তা দিলেও এনডিএ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা জানেন, রাজ্যসভায় সংখ্যা না থাকায় আর্থিক সংস্কারের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কত কঠিন। রাজ্যসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে সম্মিলিত বিরোধীদের সংখ্যা ১৩২। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৬৯ জন সদস্য রয়েছে। সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল, বামেরা সরকারের নীতির লাগাতার বিরোধিতা করে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বিরোধী দলগুলিকে নিয়মিত ভাবে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মোদী নিজেও এ দিন শরদ পওয়ারের খাসতালুক বারামতীতে পৌঁছে এনসিপির সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাজ্যসভায় এনসিপির ৬ জন সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের সমর্থন বিজেপির বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু এ দিন কলকাতায় মন্তব্য করেছেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বিরোধীদের উচিত সংসদের বাজেট অধিবেশন চলতে দেওয়া। তাঁর মতে, “বিতর্ক, আলোচনা, প্রশ্ন থাকতেই পারে,
কিন্তু সংসদ অচল করে কোনও সমাধান হয় না।”
দিল্লির হার নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। বলেন, “এটা দলের কাছে একটা ধাক্কা। তবে গত লোকসভার পর দেশের ৮টি রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ৭টিতেই বিজেপি সরকার গড়েছে। তাই বিরোধীদের উৎসাহিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”
এই বার্তা নিজেদের সংগঠন ও সঙ্ঘের সামনেও তুলে ধরতে চাইছে মোদী শিবির। বোঝাতে চাইছে, একটি রাজ্যের হার মানেই দেশের মানুষ কেন্দ্রের আর্থিক ভাবনার বিরোধিতা করছেন, এমন নয়। বরং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তাদের জীবন বদলে দিচ্ছে। আর আর্থিক সংস্কার আসলে আম আদমির স্বার্থেই। কেননা, তেজি অর্থনীতিই সামাজিক ক্ষেত্রে বিকাশের কাজ সফল করে তুলতে পারে। ভারতের মতো দেশে আঞ্চলিক অসাম্য দূর করার দাওয়াই এটাই।