—প্রতীকী ছবি।
ভোটের মুখে লালকে রেখেই সবুজ হচ্ছে জ়োম্যাটো।
এই সবুজে আমিষের ছোঁয়া নেই। আছে একশো শতাংশ নিরামিষ খাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার। এমনকি হেঁশেলে আমিষ ও নিরামিষ দু’রকম খাবার বানায়, এমন রেস্তরাঁরও চৌকাঠ মাড়াবে না নতুন সবুজ টি-শার্ট পরা জ়োম্যাটো কর্মীর সবুজরঙা বাক্সটি।
বাড়িতে রেস্তরাঁর খাবার পৌঁছনোর এই অনলাইন সংস্থার সিইও দীপিন্দর গয়াল আজ তাঁদের সংস্থার ‘পিয়োর ভেজ ফ্লিট’ চালু করার ঘোষণাটি করেছেন। এক্স হ্যান্ডলে গয়াল এ-ও লিখেছেন, ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য, এই পিয়োর ভেজ মোড বা পিয়োর ভেজ ফ্লিটের কোনও বিশেষ ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অগ্রাধিকার নেই। আবার বর্জনের উদ্দেশ্যও নেই।’ কারও কারও যদিও প্রশ্ন, দেশের বর্তমান শাসক দলের বিরুদ্ধে যখন সারা ভারতে একটিই রাজনৈতিক দলের সরকার, একটিই ভোট, একটিই ভাষা, একটিই ধর্ম এবং একই ধরনের খাদ্যাভ্যাস চালু করার চেষ্টার অভিযোগ উঠছে— তখন লোকসভা নির্বাচনের মুখে জ়োম্যাটো সিইও নিজের সংস্থার বিশুদ্ধ নিরামিষ খাবারবাহী শাখা তৈরি করে এত ব্যাখ্যাই বা দিচ্ছেন কেন?
এক্স হ্যান্ডলে গয়াল লিখেছেন, ‘শতাংশের নিরিখে নিরামিষাশীর সংখ্যা ভারতেই সবচেয়ে বেশি। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ মতামতের ভিত্তিতে দেখেছি, খাবার কী ভাবে তৈরি হচ্ছে, কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে সব বিষয়ে তাঁরা প্রচণ্ড খুঁতখুঁতে। যাঁরা একশো শতাংশ নিরামিষ খাবার চান, তাঁদের জন্য চালু হচ্ছে জ়োমাটোর একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ আঙ্গিক (পিয়োর ভেজ মোড) এবং নিরামিষ খাবার দেওয়ার জন্য আলাদা কর্মীর দল (পিয়োর ভেজ ফ্লিট)।’ অনেকে মোগলাই খানার রেস্তরাঁ থেকেও নিরামিষ ডাল মাখানি বা জনপ্রিয় পিৎজ়া চেন থেকে ভেজ পিৎজ়া অর্ডার করেন। গয়াল জানান, জ়োম্যাটোর পিয়োর ভেজ মোডে শুধুমাত্র বাছাই করা সেই সব রেস্তরাঁরই নাম দেখাবে, যেখানে আমিষের কোনও নামগন্ধ নেই। সেখান থেকে খাবার যাঁরা নিয়ে যাবেন, সেই পিয়োর ভেজ ফ্লিটের কর্মীদের পোশাক এবং বাক্স হবে সবুজ রঙের। সিইওর কথায়, ‘‘আমাদের পিয়োর ভেজ ফ্লিট শুধুমাত্র এই সব পিয়োর ভেজ রেস্তরাঁ থেকেই অর্ডার নিয়ে যাবে। অর্থাৎ কোনও মতেই কোনও নন-ভেজ খাবার, তা সে নন-ভেজ রেস্তরাঁর নিরামিষ খাবার হলেও এই সবুজ বাক্সে ঢুকবে না।’’
অর্থাৎ ধরে নেওয়া যেতে পারে, পরিচিত লাল পোশাকের জ়োম্যাটো কর্মীরা শুধুমাত্র আমিষ খাবার এবং আমিষ রেস্তরাঁর নিরামিষ খাবার পৌঁছনোর কাজ করবেন। লাল ও সবুজ, দুই বাহিনীই অর্ডার অনুযায়ী আপাতত কাজ করবে বলে তাঁর ঘোষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে। এই ঘোষণায় ইন্টারনেটে অনেকেই উচ্ছ্বসিত। এক জন লিখেছেন, ‘নিরামিষ রান্না আলাদা বাসন, আলাদা তেলে হচ্ছে কি না, এ সব নিয়ে অনেক সময়েই চিন্তা থাকে নিরামিষাশীদের। তাঁরা পিয়োর ভেজ রেস্তরাঁ থেকেই খাবার আনাতে পছন্দ করেন।’ আর এক জন মনে করাচ্ছেন, ‘আমিষ-নিরামিষ খাবারের একসঙ্গে ঠেকাঠেকি অনেকেই পছন্দ করে না।’
রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার যদিও জ়োম্যাটোর এই ঘোষণার মধ্যে এক ধরনের রাজনীতিই দেখছেন। তিনি বলছেন, ‘‘একনিষ্ঠ শাকাহারী ভারতে বড়জোর ২৫-৩০ শতাংশ। সেটাও মূলত উত্তর ভারতে। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁদেরই খাঁটি হিন্দুত্ব বা ভারতীয়ত্বের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছে। জ়োম্যাটোর এই উদ্যোগ খানিকটা সরকারি নীতির সঙ্গে তাল মেলানোই, বলব।’’ তিনি মনে করাচ্ছেন, ‘‘বাল্মীকির রামায়ণের রামও শিকার করে দেদার মাংস খেতেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কট্টর নিরামিষ আহারের গোঁড়ামি, টেবিলে বা বাসনে ছোঁয়াছুঁয়ির বাইটাও ইদানীং দেশে বাড়ছে। শুনি আইআইটি হস্টেলেও অনেকে আলাদা বসে খেতে চান। জ়োম্যাটোর ১০০ শতাংশ নিরামিষের ধারণাও সমাজে সঙ্কীর্ণতাকেই প্রশ্রয় দেবে।’’
জ়োম্যাটোর সিইও যদিও বলে দিচ্ছেন, ভবিষ্যতেও গ্রাহকের কথা শুনে খাবার-বিশেষে আলাদা আলাদা কর্মী-বাহিনী তৈরির পরিকল্পনা তাঁরা চালিয়ে যাবেন। যেমন, বাড়িতে কেক ডেলিভারির জন্য হ্যাইড্রলিক ব্যালান্সার দেওয়া এমন বিশেষ বাক্স তাঁরা আনছেন, যেখানে হাজার ঝাঁকুনি হলেও কেক থাকবে অক্ষত। কী হবে সেই কেক-বাহিনীর পোশাক আর বাক্সের রং? ভোট-বাজারে লাল-সবুজের পরে চর্চা চলছে তৃতীয় রং নিয়েও।