যোগী আদিত্যনাথ।
রাজ্য বিধানসভা ভবন এবং মুখ্যমন্ত্রীর একটি অফিসের সামনে দুই মহিলার গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘিরে তোলপাড় উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি। শুক্রবার বিকালের ওই ঘটনার পিছনে যোগী সরকারের পুলিশ কংগ্রেসের এক নেতা-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও অভিযোগ উঠেছে, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই বিরোধীদের নিশানা করছে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। এমনিতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চাপে থাকা যোগী আদিত্যনাথ সরকার এই ঘটনায় আরও বিপাকে।
কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়া রাজ্য বিধানসভা ভবন এবং মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সামনে শুক্রবার বিকেলেও নিত্য দিনের মতোই পাহারায় ছিল পুলিশ। তার মধ্যেই দুই মহিলা নিজেদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দৌড় লাগান বিধানসভা ভবনের গেটের দিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, এক মহিলা গায়ে আগুন লাগা অবস্থায় কিছুটা দৌড়ে যাওয়ার পরেই উপস্থিত কয়েক জন নানা ভাবে তাঁর দেহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেই মহিলা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। অন্য এক জন অপেক্ষাকৃত কম বয়সি মহিলার জামাকাপড়ে লাগা আগুন তত ক্ষণে নিভিয়ে ফেলেছেন কয়েক জন মিলে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অগ্নিদগ্ধ দুই মহিলা মা ও মেয়ে। তাঁদের নাম সফিয়া (৫৫) ও গুড়িয়া। উদ্ধারের পরে দ্রুত তাঁদের লখনউ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সফিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর দেহের ৯০% পুড়ে গিয়েছে। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তাঁর মেয়ের ডান হাত বেশ কিছুটা পুড়েছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। দুজনেরই করোনা পরীক্ষা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ থেকে ‘আনলক’ শুরু অসমে
কিন্তু কেন এমন করলেন মা ও মেয়ে? অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মা-মেয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা অমেঠীর বাসিন্দা। প্রতিবেশীর সঙ্গে একটি নর্দমা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে তাঁদের গণ্ডগোল চলছে। প্রতিবেশীরা প্রতিদিন তাঁদের হুমকি দিচ্ছে, অত্যাচার করছে। অভিযোগ, সব কিছু থানায় জানানোর পরেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিধানসভা ও মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সামনের আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাঁরা। এ নিয়ে হইচই শুরু হতেই নড়ে বসেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। অমেঠী থানার তিন পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দুই মহিলাকে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ তুলে অমেঠীর কংগ্রেস নেতা অনুপ পটেল-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।
বিরোধীদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কতটা অকর্মণ্য এবং প্রশাসন কতটা অসংবেদনশীল, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের কড়া সমালোচনা করেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ঘুমন্ত সরকারকে জাগানোর জন্য এটাই কি যথেষ্ট নয়? নাকি অসংবেদনশীল সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী আরও বড় ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছেন?’’ অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যোগী সরকারকে বলেছেন তিনি। বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও যোগী প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেছেন।