যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: রয়টার্স
সংসদে ওবিসি বিল পাশ হতেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। গত ১১ অগস্ট রাজ্যসভায় পাশ হওয়া সংবিধানের এই ১২৭তম সংশোধনীর বলে রাজ্যগুলি নিজের নিজের মতো করে ওবিসি তথা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকা তৈরির ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে। আগামী দিনে সব রাজ্যের রাজনীতি ও নির্বাচনেই এটি হয়ে উঠতে চলেছে রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম তাস। কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই তাদের ওবিসি তালিকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সবার আগে যে রাজ্যে এর প্রভাব পড়তে চলেছে উত্তরপ্রদেশে। এ রাজ্যে ভোট আগামী বছর। হাতে যে ক’মাস রয়েছে, তার মধ্যে ওই সংশোধনীর পুরো সদ্ব্যবহার করতে তৎপর উত্তপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, যোগী সরকার নতুন ৩৯টিকে জাতিকে ওবিসি তালিকায় আনার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
এর মধ্যে ২৪টি জাতির জন্য সমীক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানান রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি আয়োগের চেয়ারম্যান জসবন্ত সৈনী। বাকি আছে ১৫টি জাতির উপরে সমীক্ষা। সেই কাজ শেষ হলেই সরকারকে তাঁরা সমীক্ষা-ভিত্তিক সুপারিশ জানিয়ে দেবেন। এর আগেও কয়েকটি সুপারিশ করেছে এই আয়োগ।
সূত্রের খবর, কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। কারণ, ৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর ওবিসি-ভুক্তিকে যোগী ভোটের উপহার হিসেবে তুলে ধরতে চান। এদের মধ্যে রয়েছে, হিন্দু কায়স্থ, অযোধ্যাবাসী বৈশ্য, কমলাপুরী বৈশ্য, মাহৌর বৈশ্য, দোসর বৈশ্য, রুহেলাস মুসলিম কায়স্থ, মুসলিম শাহ, মুসলিম ভাট, হিন্দু ভাট, ভট্ট, গোরিয়া, অগ্রহরি, ভূর্তিয়া, জৈসওয়ার রাজপুত, বর্ণওয়াল, কোর ক্ষত্রিয়, বোট, পঁওয়রিয়া, নোয়ানা, উমরিয়া ইত্যাদি।
সন্দেহ নেই, অল্পসংখ্যককে নিয়ে এই ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠীগুলিকে ওবিসি তালিকায় আনা হলে, বাড়তি কিছু সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পথ খুলবে তাদের। কিন্তু ভাগীদার বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান তালিকাভুক্ত ওবিসি-দের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হবে। আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে এই রাজ্যে ৭৯টি জাতি বর্তমানে ওবিসি হিসেবে সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মোট ২৫.৮৪% সংরক্ষণের সুবিধা পায়। এরা উত্তরপ্রদেশের মোট জনসংখ্যার ৫৪%। ৩৯টি নতুন জাতি এ বার সেই সংরক্ষণে ভাগ বসালে বর্তমান ওবিসি-তালিকাভুক্তরা কতটা খুশি হবেন, ভোটবাক্সে তার কী প্রভাব পড়বে, সে সবও ভাবতে হচ্ছে যোগীকে।
উত্তরপ্রদেশে জাঠরা বেশ প্রভাবশালী। আগে সাধারণ শ্রেণিভুক্ত থাকলেও বর্তমানে তারা রাজ্যের ওবিসি তালিকায় রয়েছে। অপেক্ষায় রয়েছে কেন্দ্রীয় তালিকায় নাম ওঠার। সংরক্ষণে ভাগীদার ও প্রতিযোগিতা বাড়লে জাঠ বা যাদবদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সেটাও বিজেপির আর এক ভাবনা। উত্তরপ্রদেশে যোগী বা বিজেপিকে তাই অনেক অঙ্ক কষেই এগোতে হচ্ছে। রাজনীতির লোকজন মনে করছেন, আগামী দিনে অন্য সব রাজ্যেও এই ভোট অঙ্ক মিলিয়ে ওবিসি-রাজনীতি করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। যার দরজাটি খুলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সমর্থন জানিয়েছে বিরোধী দলগুলিও।