ফাইল ছবি
প্রথমে হুমকি, তার পরেই বিক্ষোভকারীদের ‘শায়েস্তা’ করতে বুলডোজ়ার নিয়ে নেমে পড়ল যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। পয়গম্বরকে নিয়ে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে গত কাল উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রয়াগরাজের মতো শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও বাধে বিক্ষোভকারীদের। তার আগে কানপুরেও গোষ্ঠী সংঘর্ষ দানা বেধেছিল। আজ উত্তরপ্রদেশের সহারানপুর ও কানপুরে হিংসা ছড়ানোয় মুল অভিযুক্তদের সম্পত্তি ধ্বংস করার কাজ শুরু করল যোগীর প্রশাসন। সহারনপুর পুলিশের শেয়ার করা একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিরাট সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে পুরকর্মীরা বুলডোজ়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। সমাজে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে ধৃত দুই অভিযুক্তের বাড়ি বুলডোজ়ার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কানপুরেও গোষ্ঠী সংঘর্ষে মূল অভিযুক্ত জ়াফর হায়াত হাসমির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে কানপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি।
গতকালের বিক্ষোভকারীদের ‘শায়েস্তা’ করতে বুলডোজার যে নামানো হবে, তার ইঙ্গিত অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন যোগীর মিডিয়া অ্যাডভাইসর মৃত্যুঞ্জয় কুমার এবং বিজেপির অন্য কয়েকজন নেতা। গতকালের ঘটনার পর আজ হুমকির সুরে মৃত্যুঞ্জয় টুইটারে লিখেছেন, ‘‘গোলমাল করছে যারা, তাদের মনে রাখতে হবে, প্রতি শুক্রবারের পরেই শনিবার ঠিক আসবে।’’ এই বক্তব্যের সঙ্গেই বুলডোজ়ারের একটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি। শুধু যোগী প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই নয়, উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার বিজেপির বিধায়ক শলভমনি ত্রিপাঠীও সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা গিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া কয়েক জন যুবককে মারছেন পুলিশকর্মীরা। কবে, কোথায় এই ঘটনা ঘটেছে— তা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই ছবির সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক লিখেছেন, ‘‘বিদ্রোহীদের রিটার্ন গিফট।’’ আদিত্যনাথের প্রাক্তন মিডিয়া অ্যাডভাইসর ছিলেন শলভ। পুলিশি মারের ছবি পোস্ট করে বিজেপি বিধায়কের উল্লাস বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যোগী সরকারের মন্ত্রী ও প্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহও অভিযুক্তদের ঘরবাড়ি ভাঙতে বুলডোজ়ার চালানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। যোগী নিজেও আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যে সমাজবিরোধীরা গত কয়েক দিনে রাজ্যে অশান্তি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গতকালের ঘটনার পর সমাজে সম্প্রতি নষ্ট ও শান্তিভঙ্গের অভিযোগে সহারানপুরে ৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই শহরে গোলমাল ছড়ানোয় দুই অভিযুক্ত মুজ়াম্মিল ও আব্দুল ওয়াকিরের বাড়ির কিছু অংশ আজ বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে দিয়েছেন পুরকর্মীরা। তাঁদের অবশ্য দাবি, ওই নির্মাণ অবৈধ ছিল। কানপুরে গত ৩ জুনের গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর মূল অভিযুক্ত জ়াফর হায়াত হাসমির আত্মীয় মহম্মদ ইসতিয়াকের নবনির্মিত ভবনও ভেঙে দিয়েছেন সেখানকার পুরকর্মীরা। কানপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘‘ওই সম্পত্তিতে মূল অভিযুক্তের বিনিয়োগ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।’’
গতকালের বিক্ষোভ ও ঢিল ছোড়ার ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের সাতটি জেলা থেকে মোট ২৫৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে হাথরস থেকে ৫০ জন, প্রয়াগরাজ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৮ জনকে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াগরাজের রাজনৈতিক কর্মী জাভেদ মহম্মদ। পুলিশের দাবি, গতকালের ঘটনার পিছনে মূল মাথা জাভেদই। জেলবন্দি জেএনইউ ছাত্র নেতা উমর খালিদের বাবা এসকিউআর ইলিয়াসের ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া’-র নেতা জাভেদ। ওই গ্রেফতারিকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে জাভেদের মুক্তির দাবি তুলেছেন ইলিয়াস। প্রয়াগরাজের এসপি অজয় কুমার জানান, ২৯টি ধারায় ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্যাংস্টার আইন ও জাতীয় সুরক্ষা আইনে মামলা চালানো হবে ধৃতদের বিরুদ্ধে।
এ দিকে, বিজেপির সাসপেন্ড হওয়া নেত্রী নূপুর শর্মার মন্তব্যকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে ভাবে বিক্ষোভ দানা বেধেছে, তা নিয়ে সতর্ক করে সব রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কেন্দ্র।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।