যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল ছবি।
লোকসভা ভোটের ফলাফলে রাজ্যপাট কার্যত যাওয়ার দশা হয়েছিল যোগী আদিত্যনাথের। দলের মধ্যেই শোনা গিয়েছিল বিক্ষোভের স্বর। উত্তরপ্রদেশে তাঁর ‘ম্যাজিক’ এখনও অটুট প্রমাণ করতে আগামী মাসে ৯টি বিধানসভা উপনির্বাচনকেই পাখির চোখ করছেন যোগী। রাজনীতিকদের মতে, লোকসভার পরে উপনির্বাচনেও খারাপ ফল হলে তাঁর পক্ষে লখনউয়ের তখ্ত ধরে রাখা কঠিন হবে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন তিনি।
বিজেপি শিবিরের মতে, উত্তরপ্রদেশে লোকসভা নির্বাচনে হারের অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে, প্রশাসনের একাংশের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। বিষয়টি বুঝেই লোকসভার পরে ভোটমুখী জেলাগুলিতে প্রশাসনিক ও পুলিশি পদে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেন আদিত্যনাথ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ আমলা নিয়োগের অভিযোগ উঠলেও কর্ণপাত করেননি। পাশাপাশি লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের ফলে কিছুটা নিজের রাশ টেনেও রেখেছিলেন যোগী। কিন্তু এ যাত্রায় ঘনিষ্ঠ ১৬ জন বর্ষীয়ান মন্ত্রী এবং ১৪ জন প্রতিমন্ত্রীকে উপনির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছেন যোগী। সূত্রের মতে, সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট নিচ্ছেন তিনি। জোর দিচ্ছেন পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলিতে। ভোট ঘোষণার অন্তত দেড় মাস আগে থেকে প্রচারে নেমে পড়েছেন যোগী।
লোকসভার আগে বিজেপি-আরএসএস মতানৈক্যও খারাপ ফলের অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। সেই দূরত্ব কমাতেও ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়ে যোগী সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তা ছাড়া উত্তরপ্রদেশে গত দশ বছরে বিজেপির ভাল ফল করার পিছনে ওবিসি, দলিত সম্প্রদায়ের নিঃশর্ত সমর্থন কাজ করেছিল। কিন্তু লোকসভায় বিজেপির ঘর ভাঙেন অখিলেশ যাদব। যার ফলে এসপি ও কংগ্রেস জোট রাজ্যের ৮০টি লোকসভার মধ্যে ৪৩টি আসন জিততে সক্ষম হয়।
সরে যাওয়া সেই ওবিসি ও দলিত ভোটকে ফের বিজেপির দিকে ফিরিয়ে আনাও বড় চ্যালেঞ্জ যোগীর জন্য। কারণ যে ন’টি আসনে ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে গত বিধানসভায় চারটিতেই এসপি জিতেছিল। মাত্র তিনটি জেতে বিজেপি। ফলে এসপি’র কাছ থেকে জেতা আসন ছিনিয়ে এনে ওবিসি ও দলিত ভোট ব্যাঙ্ক যে বিজেপিতেই ফিরেছে, তা প্রমাণ করাও যোগীর অন্যতম লক্ষ্য। হরিয়ানা মডেল উত্তরপ্রদেশেও সফল করে দেখানো তাঁর চ্যালেঞ্জ। রাজনীতিকদের মতে, উপনির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে রাজ্যে দলিত ও ওবিসি সমাজের বিজেপির পিছন থেকে সরে যাওয়াটা সাময়িক না দীর্ঘস্থায়ী। যদি এই প্রবণতা উপনির্বাচনেও লক্ষ করা যায়, ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হবে।