দেরির-ই মাসুল গুনেছে বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। ফাইল চিত্র।
নির্ধারিত সময়ের থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরি। শুক্রবার সেই দেরির-ই মাসুল গুনেছে বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর এক্সপ্রেস।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বাহানাগা বাজার স্টেশনের অদূরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, সঙ্গে আরও দু’টি মালগাড়ি। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস সে দিন চলছিল তিন ঘণ্টা ২৭ মিনিট দেরিতে। দুপুর ৩টে ২৮ মিনিটে বাহানাগা বাজার স্টেশন পার করার কথা ছিল ডাউন যশবন্তপুরের। কিন্তু সেই ট্রেন বাহানাগা পেরোয় ৬টা ৫৫ মিনিটে। আর তখনই দুর্ঘটনায় পড়ে আপ করমণ্ডল। যার ধাক্কা এসে লাগে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেও।
এই দুর্ঘটনায় মৃত ২৭৫ জন ট্রেন যাত্রীর বেশিরভাগই করমণ্ডলে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও দু’টি অসংরক্ষিত কামরা-সহ চারটি কামরা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। ফলে, হতাহতের সংখ্যা সেই ট্রেনেও নেহাত কম নয়। খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমারও কবুল করেন, ‘‘দুর্ঘটনার দিনে বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর এক্সপ্রেস দেরিতে চলছিল।’’ রেল সূত্রে খবর, দেরিটা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। ওই দিন ট্রেনটি কটক স্টেশনে পৌঁছয় দুপুর আড়াইটেয়। অথচ পৌঁছনোর নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ১১টা ৫০ মিনিট। তার পরে কটকেও প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। পথে আরও দেরি হয়।
যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের চালক চিত্তরঞ্জন রথও মানছেন, ‘‘দেরি হচ্ছিল। কটক থেকে ৩টে নাগাদ ছাড়ে ট্রেনটি। তার পরেও দেরিতে চলছিল। এখন মনে হচ্ছে, আর একটু সময়ে চললে আমরা দুর্ঘটনা এড়াতে পারতাম।’’
যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ওই দিন কটক থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফিরছিলেন খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা বছর ষাটেকের কশিতা দাস। সঙ্গে ছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের মেয়ে হীরা নায়েকও। আসন সংরক্ষণ ছিল না তাঁদের। মা-মেয়ে উঠে পড়েছিলেন শেষ কামরায়। দুর্ঘটনায় সেই কামরার ভিতরে ভারী যন্ত্রে চাপা পড়ে যান হীরা। মাথায় আঘাত লাগে কশিতার। তবে জ্ঞানটুকু ছিল। চিৎকারও করেছিলেন মেয়েকে বাঁচাতে। পারেননি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া হীরার দেহ সৎকার করেছেন পরিজনেরা। বালেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কশিতার হাহাকার, ‘‘সে দিন ট্রেনটা যদি সময়ে চলত, মেয়েটাকে হারাতে হত না।’’