Yashwant Sinha

President Election 2022: যশবন্ত পরিস্থিতির ফল, মাঠের লড়াই চলবে, বোঝাচ্ছে সিপিএম

বিরোধী জোটের প্রার্থী হিসেবে সিপিএম তথা বামেরা কেন যশবন্তকে সমর্থন করছে, তা নিয়ে অসন্তোষ ও প্রশ্ন দানা বেঁধেছে দলের ভিতরে-বাইরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ০৫:১৫
Share:

যশবন্ত সিন্হা। ফাইল চিত্র।

পরিস্থিতির চাপে এবং বিজেপি-বিরোধী সার্বিক ঐক্যের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্যপ্রাক্তন নেতা যশবন্ত সিন্হাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু মাঠে-ময়দানের রাজনীতিতে এবং সাধারণ নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে না বলেই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, অতীতেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অভিন্ন কোনও প্রার্থীকে একসঙ্গে সমর্থন করার পরে দু’টি দল পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটে লড়াই করেছে। সেই ধারা মেনেই বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব মানুষের সমর্থন একজোট করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে সিপিএম। যা ঠিক হয়েছে গত রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসেও।

Advertisement

তৃণমূলের প্রবল বিরোধী অবস্থানে থেকেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হিসেবে সিপিএম তথা বামেরা কেন যশবন্তকে সমর্থন করছে, তা নিয়ে অসন্তোষ ও প্রশ্ন দানা বেঁধেছে দলের ভিতরে-বাইরে। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বিজেপি-বিরোধী দলগুলির বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এক জন অভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সমবেত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শরদ পওয়ার, ফারুখ আবদুল্লা ও গোপালকৃষ্ণ গান্ধী রাজি না হওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে যশবন্তকে সমর্থন করতেই বিরোধী শক্তি সম্মত হয়েছে। সিপিএমও তাতে শামিল। ইয়েচুরি মনে করিয়ে দিয়েছেন, অতীতেও সুর্নিদিষ্ট ক্ষেত্রে কংগ্রেস ছেড়ে আসা জগজীবন রাম বা ভি পি সিংহকে বামেরা সমর্থন করেছে।

বাম শিবিরের মধ্যে পিডিএসের মতো কিছু দল বিজেপি-বিরোধী এমন সার্বিক ঐক্যের পক্ষেই সওয়াল করে আসছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পিডিএসের নেতা সমীর পূততুণ্ড বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস এবং বামেরা ধৈর্য ধরে এই পথে এগোতে পারলে বিজেপিকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া সম্ভব।’’ স্বভাবতই বাম শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পথ ধরে লোকসভা নির্বাচনেও কি সার্বিক বিরোধী ঐক্য হবে? কারণ, বিজেপিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করতে গেলে সাধারণ নির্বাচনে তাদের পরাস্ত করে ক্ষমতা থেকে সরানো আরও বেশি প্রয়োজন। সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য বলছেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আর সাধারণ নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত এক করে দেখলে চলবে না। অতীতেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করেছে বামেরা, তার পরে আবার কংগ্রেসের সঙ্গে ভোটে লড়াই হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী ঐক্য আছে বলে কেরলে কি কংগ্রেস-সিপিএম লড়াই হবে না? নাকি বাংলায় সিপিএম-তৃণমূল লড়বে না?’’ দেশের ক্ষেত্রে বিজেপির বিরুদ্ধে এবং এ রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার লাইনই রাজ্য সম্মেলন পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত হয়েছে বলে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

ঘরে-বাইরে ওঠা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ‘বিভ্রান্তি’ কাটাতে রাজ্য সিপিএমের মুখপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘বিজেপি আমাদের সংবিধানকে খর্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে, সংবিধানে স্বীকৃত সংসদ, নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থার মতো স্বাধীন সংস্থাগুলিকে খর্ব করছে। এই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এক জন অভিন্ন প্রার্থীর প্রশ্নে সর্বোচ্চ সম্ভব বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সমবেত করার কাজ করতে হচ্ছে। এটাই পার্টির অবস্থান।’’ প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা যশবন্তের অতীত নিয়েও। ইয়েচুরির বক্তব্য, যশবন্ত এখন আর তৃণমূলের নন, বিরোধী জোটের প্রার্থী। তা ছাড়া, ইন্দিরা গান্ধী ও জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়ে জগজীবন রাম কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে এলে তাঁরা সমর্থন করেছিলেন। অন্যথায় জনতা পার্টির সরকার তৈরি হত না। একই ভাবে রাজীব গান্ধী সরকারের অর্থমন্ত্রী ভি পি দুর্নীতির প্রশ্নে যখন বেরিয়ে আসেন, তখনও বামেরা তাঁকে সমর্থন করেছে। ইয়েচুরির মতে, সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বামেদের নিতে হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement