শবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার পথে বিক্ষোভ ‘মন্দির বাঁচাও’ আন্দোলনের কর্মীদের। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।
না, মহিলাদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না শবরীমালা মন্দিরের আয়াপ্পা গর্ভগৃহে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরোয়া না করে মঙ্গলবার এই ভাবেই বাধা দেওয়া হল মহিলাদের। আর তার জন্য বিক্ষোভকারীরা সামনে এগিয়ে দিলেন মহিলাদেরই।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আগামী কাল, বুধবার থেকেই সব বয়সী মহিলাদের জন্য কেরলের শবরীমালা মন্দিরের প্রবেশদ্বার খুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে শবরীমালা মন্দিরের আশপাশের এলাকায়। মন্দিরে ঢোকার মূল পথে, নীলাক্কাল বেস ক্যাম্পে ‘শবরীমালা মন্দির বাঁচাও’ আন্দোলনের শরিক মহিলারা রাস্তায় বসে পড়েন মন্দিরের প্রবেশদ্বার পাহারা দিতে। পাম্বার পর মন্দিরের দিকে আর এগোতে দেওয়া হয়নি মহিলাদের। পাহাড়চূড়োয় শবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার পথে সব গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা করেন বিক্ষোভকারীরা। গাড়িতে মহিলা থাকলেই তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয় বা গাড়ি রুখে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ায় কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনও। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে কী করণীয়, তা নিয়ে আলোচনা করতে এ দিন জরুরি বৈঠকে বসছে ত্রিবাঙ্কুর দেবাশ্রম বোর্ড।
ও দিকে, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এ দিন বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে এই ভাবে কিছুতেই হাতে তুলে নিতে দেবে না আমজনতাকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক আগামী কাল থেকে সব বয়সের মহিলারা যাতে শবরীমালা মন্দিরের আয়াপ্পা গর্ভগৃহে ঢুকতে পারেন, প্রশাসনের তরফে তা সুনিশ্চিত করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় খতিয়ে দেখার জন্য সরকার আদালতে কোনও রিভিউ পিটিশন করবে না। আমরা শীর্ষ আদালতে জানিয়ে দিয়েছি, আদেশ কার্যকর করা হবে।’’
শবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার পথে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার
ত্রিবাঙ্কুর দেবাশ্রম বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায়, তা নিয়ে ‘তন্ত্রী’ (পুরোহিত), ‘পান্ডালাম’ (পান্ডা) ও ভক্তদের একটি সংগঠন ‘আয়াপ্পা সেবা সঙ্গম’-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’
শবরীমালার আয়াপ্পা মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকার ইচ্ছা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রেশমা নিশান্ত নামে এক মহিলা। রেশমার ওই সংকল্প জানার পর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের একদল সমর্থক তাঁর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁর উদ্দেশে হুমকি দিয়ে স্লোগানও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি যে মন্দিরে প্রবেশাধিকার পাবেন না, তা বুঝিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
গত মাসেই ১০-৫০ বছরের মহিলাদের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর পরই কেরল জুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মতো সকল বয়সের মহিলারা আয়াপ্পার মন্দিরে ঢুকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ভক্তদের একাংশ ইতিমধ্যেই হঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছেন, মহিলাদের প্রবেশ রুখতে প্রয়োজনে তাঁরা রাস্তায় শুয়ে পড়বেন।
আরও পড়ুন- রাফাল: অম্বানীর সংস্থাকে মানতে ‘বাধ্য’ হয়েছিল দাসো, জানাল নথিপত্র
আরও পড়ুন- শবরীমালায় প্রবেশের ইচ্ছা ফেসবুকে জানাতেই বিক্ষোভের মুখে শিক্ষিকা
পেশায় কলেজ শিক্ষিকা, বছর বত্রিশের রেশমার কাছে এই সমস্ত হঁশিয়ারি উপেক্ষা করে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা বৈপ্লবিক কিছু নয়। তাঁর ফেসবুক পোস্ট বলছে, ‘এক জন ভক্তের সাহসী পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বহু ভক্তকে ওই মন্দিরে প্রবেশের প্রেরণা দেবে।’’