—প্রতীকী ছবি।
বিলের নাম ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’। এই নামের মধ্যে এবং বাইরেও লুকিয়ে রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের নারীদের প্রতি চিরন্তন পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি— আজ মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল পাশের দিন সংসদের ভিতরে ও বাইরে, এই মর্মে সরব হতে দেখা গেল বিরোধী দলের নারী সাংসদদের।
ডিএমকে সাংসদ কানিমোিঝ তাঁর বক্তৃতায় বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তাঁর কথায়, “আপনারা বিলে বন্দনা শব্দটি রেখেছেন। আপনাদের অনুরোধ, আমাদের দয়া করে কুর্নিশ করবেন না, বন্দনা করবেন না। কোনও বেদীতে বসাবেন না। আমরা আপনাদের সঙ্গে একাসনে বসতে চাই। আমাদের প্রতিনিধিত্ব চাই।” ট্রেজারি বেঞ্চের প্রতি তাকিয়ে তাঁর শ্লেষ, “পেরিয়ার সংসদেই বলেছিলেন, পুরুষ ভান করে যে তারা মহিলাদের সম্মান করে, তাঁদের স্বাধীনতার জন্য চেষ্টাও করছে। আসলে এটা নারীদের ঠকানোর পন্থা ছাড়া কিছুই নয়!” তাঁর এই মন্তব্যের পরে বিরোধী বেঞ্চের মহিলা সাংসদদের অনেকেই টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানিয়েছেন।
তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার সরাসরি আক্রমণ করেছেন মোদীর নেতৃত্বকে। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেখানে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি শাসিত ১৬টি রাজ্যে খুঁজলেও এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পাওয়া যাবে না।” একইসঙ্গে তিনি বিজেপির ‘নারীবিদ্বেষী’ মানসিকতার সপক্ষে মহিলা কুস্তিগিরদের হেনস্থার অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছেন। বলেছেন, “সোনা জয়ী মেয়েদের যৌন হেনস্থা করেছেন যে ব্রিজভূষণ, তাঁকে তো শাস্তি দেওয়া হয়ইনি, বরং তিনি বহাল তবিয়তে সাংসদ হয়ে বসে রয়েছেন। বিজেপি সরকার কেন ব্যবস্থা নেয়নি তাঁর বিরুদ্ধে? উন্নাও, হাথরস, জম্মুর কাঠুয়ায় নির্যাতিত এবং নিহত নারীদের পরিবার বিচার পায়নি। কারণ, এই সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।”
তৃণমূলেরই আর এক সাংসদ শতাব্দী রায়ের বক্তব্য, “বিজেপির মন্ত্রী ও নেতারা সমানে তালিকা দিয়ে বলছেন, তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের কোন বিষয়ে কত কিছু দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি তো দান করার নয়। এটা বিজেপিকে বুঝতে হবে। যে দিন এই মানসিকতা বন্ধ হবে, নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা পাবে, সে দিন এই বিল পাশের সার্থকতা।”
শরদ পওয়ারের কন্যা এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের কথায়, “বিজেপির মানসিকতা বোঝাতে উদাহরণ দিই। মহারাষ্ট্রে বিজেপির প্রধান এক বার প্রকাশ্যে একটি চ্যানেলে বলেছিলেন, সুপ্রিয়া সুলে, তুমি ঘরে ফিরে যাও, রান্না করো বরং!’ দেশ অন্য কেউ চালিয়ে নেবে।” সুলের মতে, এই মন্তব্য নিছক রাজনৈতিক বিরোধিতার নয়, সার্বিক নারীবিদ্বেষের।
এনসিপির এই নেত্রী আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের কথা। স্মরণ করেছেন ২০১০ সালে রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হওয়ার পিছনে বৃন্দার সক্রিয় ভূমিকার কথা।
সেই বৃন্দা আজ সরব হয়েছেন, বিজেপি নেতাদের মানসিকতা নিয়ে। তাঁর কথায়, “বিজেপির দলীয় রাজনৈতিক দর্শনই হল পুরুষতান্ত্রিকতাকে পুষ্ট করা।” তাঁর প্রশ্ন, “বিলের প্রস্তাবনায় বিজেপি সরকার লিখেছে, তারা নারীদের গ্যাস সিলিন্ডার দিয়েছে, শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছে! এ সব কী? এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক সমানাধিকারের কী সম্পর্ক?”
প্রধানমন্ত্রী গতকাল লোকসভায় বলেছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে দিয়ে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করাচ্ছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা করে বৃন্দার বক্তব্য, কারও দয়ায় নয়, নারীরা লড়াই করে এই অধিকার আদায় করেছেন।