দরগার পথে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
প্রার্থনায় সমান অধিকার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন মেয়েরা। মঙ্গলবার তাঁরা মুম্বইয়ে আরব সাগরের উপরে বিখ্যাত হাজি আলি দরগার কেন্দ্রস্থলে প্রবেশাধিকার ফিরে পেলেন। সমাজকর্মীরা বলছেন, এর পরের লক্ষ্য কেরলের শবরীমালা মন্দির।
হাজি আলি দরগায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত সর্বত্র মেয়েদের যাতায়াতের অধিকার ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে হঠাৎই দরগার ট্রাস্ট সিদ্ধান্ত নেয়, এ বার থেকে দরগার একেবারে কেন্দ্রস্থলে পবিত্র সমাধি পর্যন্ত মেয়েরা আর যেতে পারবেন না। ২০০ মিটার দূরে আটকে দেওয়া হবে তাঁদের। যুক্তি হিসেবে বলা হল, ধর্মীয় রীতি মানলে এমনটাই হওয়ার কথা। অন্যথায় ‘বড় পাপ’ হয়।
দীর্ঘ পাঁচ বছরের আইনি লড়াইয়ের পরে এ দিন ছিল হাজি আলিতে নতুন করে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিয়ে ফেরার দিন। বিকেল তিনটে নাগাদ ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংগঠনের প্রায় ৮০ প্রতিনিধি দরগায় ঢোকেন। আন্দোলনকারীদের অন্যতম জাকিয়া সোমান পরে আনন্দিত স্বরে বলেন, ট্রাস্টিরা তাঁদের সঙ্গে খুবই ভাল ব্যবহার করেছেন। তাঁদের চা খাইয়েছেন। এর পর থেকে মেয়েরা নিয়মিতই দরগায় আসবেন।
ঘটনা হল, হাজি আলি একা নয়। দেশ জুড়ে বিভিন্ন মন্দির-মসজিদ-দরগাতেই মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। কেরলের শবরীমালা মন্দিরে তো মেয়েদের একেবারেই ঢোকার অধিকার নেই। হাজি আলিতে যেহেতু বিষয়টা প্রথম থেকে এমন ছিল না, আচমকা নিষেধাজ্ঞা নেমে আসায় ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় মহিলারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। নূরজাহান ফৈয়াজ, জাকিয়া সোমানরা আদালতে মামলা করেন।
বম্বে হাইকোর্ট এ বছরেরই ২৬ অগস্ট তার রায়ে, মহিলাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দেওয়ার কথা বলে। মামলা তার পরে যায় সুপ্রিম কোর্টে। ইতিমধ্যে দরগা ট্রাস্টের ভিতরেও বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া হয়। ট্রাস্ট আদালতে বলে যে, তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চায়। প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর এই মামলার শুনানি চলাকালীনই মন্তব্য করেন, শুধু হাজি আলি নয়, যে কোনও ধর্মস্থানেই মেয়েদের সমান প্রবেশাধিকার
থাকা উচিত।
শবরীমালা নিয়ে অন্য একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টেই বিচারাধীন রয়েছে। তবে হাজি আলিতে জয় পেয়ে শবরীমালার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী শোনাচ্ছে মেয়েদের গলা। আন্দোলনে নামা ভূমাতা ব্রিগেডের নেত্রী তৃপ্তি দেশাই বলেন, হাজি আলির ঘটনা দেশের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত। সমস্ত মন্দির-মসজিদেই মেয়েদের প্রতি বৈষম্যের শেষ হওয়া দরকার।