woman

কারাবাস শেষেও জন্নত ফিরতে পারছেন না নিজের দেশে

ইতিমধ্যে ফিরোজ তাঁর ভগ্নিপতিকে নিয়ে শিলচরে এসে জেল সুপারের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু ওই প্রক্রিয়াগত জটিলতায় জন্নতকে এখনই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

Advertisement

উত্তমকুমার সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৪
Share:

জন্নত খাতুন।

শিলচর জেলের খাতায় লেখা, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে। বস্তুত, আদালতের রায়েই এমনটা লেখা। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর বিএসএফ তাঁকে অসমের কাছাড় জেলায় কাটিগড়ার আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছিল। পরের দিন থেকে শিলচর জেলে রয়েছেন জন্নত খাতুন। অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে আদালত তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ড দেয়। সেই মেয়াদ কবেই ফুরিয়েছে। কিন্তু তাঁকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়াই শুরু করা যায়নি। কারণ আদালতে প্রমাণ করতে না পারলেও সেই প্রথম দিন থেকে জন্নত নিজের ঠিকানা বলছেন, ‘‘বাড়ি লক্ষ্মীপুর, থানা লক্ষহরপুর, জেলা সারলাহি, দেশ নেপাল।’’

Advertisement

শেষ পর্যন্ত তাঁর দাবিই যে ঠিক, তা স্বীকার করে নিয়েছেন নেপাল সরকারের কলকাতাস্থিত কনসাল বিনোদ মুখিয়া। শিলচরের জেল সুপারকে চিঠি পাঠিয়ে তিনি জানান, জন্নত নেপালেরই বাসিন্দা। জন্নতের পুত্র ফিরোজ লাহিরির হাতে তাঁকে তুলে দিতে অনুরোধ করেছেন নেপালের বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তা।

ইতিমধ্যে ফিরোজ তাঁর ভগ্নিপতিকে নিয়ে শিলচরে এসে জেল সুপারের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু ওই প্রক্রিয়াগত জটিলতায় জন্নতকে এখনই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার বা আদালতই তাদের নির্দেশ দিতে পারে। অন্য দেশের নির্দেশ বা অনুরোধ তারা সরাসরি কার্যকর করতে পারে না। অসম সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের উপ-সচিব নিবেদিতা গোস্বামী জানিয়েছেন, শিলচরের জেল সুপারের চিঠির সূত্র ধরে তাঁরা ভারত সরকারকে চিঠি লিখেছেন। এখন ভারত নেপাল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারা জন্নতের ঠিকানা নিশ্চিত করে ভারতকে চিঠি দিলেই তিনি ছাড়া পেতে পারেন।

Advertisement

এত ‘জটিল প্রক্রিয়া’ সেরে মাকে জীবিত অবস্থায় দেশে ফেরাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ফিরোজ আশঙ্কায়। কারণ বেশ কিছু দিন ধরেই জন্নত অসুস্থ। পাঁচ বছর পরে গত সপ্তাহে যে দিন জেলে মা-ছেলের দেখা হয়, সেই রাতেই তাঁকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে হয়েছিল। আজও তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, তাঁর গলব্লাডারে পাথর হয়েছে। রক্তাল্পতাতেও ভুগছেন। এর মধ্যে তাঁকে এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে।

অসম নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির প্রধান সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ জন্নতের চিকিৎসার ব্যাপারে যোগাযোগ রাখছেন। তিনিই গত বছর জন্নতের কথা জেনে জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠনে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই সূত্রে নেপালের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফিরোজকে খুঁজে বার করে কলকাতার কনসুলেটে তাঁকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

জন্নত থানা-আদালত-জেলে যে কথা বলছিলেন, একই কথা জানিয়েছেন ফিরোজকে। বলেছেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে মেয়ের বাড়িতে যাব বলে রওনা হয়েছিলাম। পথ হারিয়ে এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই মহিলা বাড়ি ফেরানোর কথা বলে দু’মাস ধরে আমাকে এখানে-ওখানে রাখে। শেষে বিএসএফ যখন ধরে, তখন জানতে পারি, ভারতে আছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement