২২ বার কোপ, শুধুই দর্শক দিল্লি

আড়াই মিনিটে বাইশ বার। ধারালো কাঁচির ফলা দিয়ে একটি মেয়েকে ক্রমাগত কুপিয়ে চলল একটা লোক। ছটফট করতে করতে মেয়েটার দেহটা যখন নিথর হয়ে গেল, তখন বার কয়েক লাথি মেরে চলে গেল সে। আর পুরো ঘটনার সাক্ষী রইল পথচলতি মানুষ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

তখনও কোপানো চলছে। মঙ্গলবারের সিসিটিভি ফুটেজ।

আড়াই মিনিটে বাইশ বার।

Advertisement

ধারালো কাঁচির ফলা দিয়ে একটি মেয়েকে ক্রমাগত কুপিয়ে চলল একটা লোক। ছটফট করতে করতে মেয়েটার দেহটা যখন নিথর হয়ে গেল, তখন বার কয়েক লাথি মেরে চলে গেল সে। আর পুরো ঘটনার সাক্ষী রইল পথচলতি মানুষ। প্রথমে এক পথচারী একটু এগোলেও পরে আর কেউ লোকটাকে থামানোর চেষ্টা করলেন না, কেউ ডেকে আনলেন না পুলিশকে, কেউ গাড়িও থামালেন না। মঙ্গলবার সকালে উত্তর দিল্লির বুরারি এলাকার এই ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নির্ভয়ার শহর অমানবিক ছিল, অমানবিকই রয়ে গিয়েছে।

পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজে। দেখা গিয়েছে, বুরারির লেবার চক এলাকায় হঠাৎ মোটরবাইক থেকে নেমে পড়ল এক যুবক। নেমেই ঝাঁপিয়ে পড়ল পথচলতি এক মহিলার ওপর। বড়, ধারালো কাঁচির দু’টো ফলা দিয়ে কোপাতে শুরু করল তাকে। এই ঘটনা দেখে প্রথমে ছুটে এসেছিলেন এক জন। কিন্তু দুষ্কৃতী তাকে কাঁচি নিয়ে শাসানোয় তিনিও চলে যান। তার পর আড়াই মিনিট ধরে মেয়েটিকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে যায় লোকটা। অঝোরে রক্তপাত হতে হতে, ছটফট করতে করতে মেয়েটি এক সময় থেমে যায়। আততায়ী কিন্তু তখনও থামেনি। পাথর দিয়ে মেয়েটির মাথা থেঁতলে দেয় সে। তারপর নিষ্পন্দ দেহে কয়েক বার লাথি মেরে মোটরবাইকে উঠে চলে যায়।

Advertisement

পরে জানা যায়, নিহত মেয়েটির নাম করুণা কুমার। বয়স ২১। একটি স্কুলে পড়াতেন। আজ সকালেযখন তাঁর ওপর হামলা হয়,তখন তিনি স্কুলেই যাচ্ছিলেন। আততায়ী সুরেন্দ্র সিংহ তার পূর্ব পরিচিত। মেয়েটির পরিবার জানিয়েছে, সুরেন্দ্রর কম্পিউটার সেন্টারে দু’জনের আলাপ হয়। দুই সন্তানের বাবা, বছর ৩৪-এর সুরেন্দ্রর বিবাহবিচ্ছেদের মামলাও চলছিল। কয়েক মাস আগে করুণাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল সে। করুণা প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে বেজায় উত্যক্ত করা শুরু করে। মাস ছয়েক আগে করুণার পরিবার বিষয়টি পুলিশকেও জানায়। তবে দুই বাড়ি থেকে বিষয়টি নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশের অনুমান, সেই আক্রোশের জেরেই এই ঘটনা। সুরেন্দ্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটির সাক্ষী ছিলেনবেশ কিছু পথচলতি মানুষ। কিন্তু এক জন ছাড়া কেউই মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাননি। সবাই কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে, ঘাড় ফিরিয়ে ভয়াবহ ঘটনাটি দেখেছেন, তারপর নিজেদের কাজে হাঁটা দিয়েছেন। বেশ কিছু মোটরবাইক ও গাড়িও চলে গিয়েছে পাশ দিয়ে। কিন্তু কেউ থামেনি, কেউ পুলিশ ডেকে আনেনি।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে দিল্লির আপ সরকার। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রের অধীনে। সেই প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া বলেন, আপের বিধায়কদের হেনস্থা করার বদলে দিল্লির নিষ্ক্রিয় পুলিশের উচিত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নজর দেওয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement