Vikas Dubey

‘ঠোক দিয়ে যায়েঙ্গে’! যোগীর এই মন্ত্রেই কি ‘এনকাউন্টারে’ নিহত শতাধিক?

গত দু’বছরে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে  ১০৩ জন অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ১৮:১৯
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

অপরাধ করলে গুলি খেয়ে মরতে হবে। উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় আসার দু’মাসের মাথায় এমন ঘোষণা করেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি বার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে সে রাজ্যের পুলিশ। কিন্তু প্রতিবারই সেই সংঘর্ষের সত্যাসত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের মৃত্যু নিয়েও ফের একবার প্রশ্নের মুখে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।

২০১৭-য় বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশকে অপরাধ মুক্ত করার কথা জানিয়ে আসছিলেন তিনি। মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হওয়ার পর সেই কাজে হাত দেন তিনি। একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘অগর অপরাধ করেঙ্গে তো ঠোক দিয়ে য়ায়েঙ্গে (অপরাধ করলে গুলি খেতে হবে)।’’ তাঁর এই ঘোষণার পর ওই দিনই রাজ্য পুলিশের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, পুলিশের যে দল এনকাউন্টার করতে পারবে, তাদের হাতে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার তুলে দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

এর পর ১৬ সেপ্টেম্বর যোগী সরকারের ছ’মাস পূর্তিতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে কাজকর্মের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, অপরাধের শিকড় নির্মূল করতে ২০ মার্চ থেকে মোট ৪২০টি এনকাউন্টার চালিয়েছে তারা। তাতে ১৫ জন কুখ্যাত অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে। তা করতে গিয়ে এক জন সাব ইনস্পেক্টর-সহ ৮৮ জন পুলিশকর্মী জখম হন।

Advertisement

আরও পড়ুন: এনকাউন্টার উত্তরপ্রদেশ: যে প্রশ্ন এবং সন্দেহগুলো উঠছে​

২০১৯-এ প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে যোগী সরকারের মুখ্যসচিব অনুপচন্দ্র পান্ডের তরফে সমস্ত জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে বলা হয়, ১৬ মাসের মধ্যে ৩ হাজার ২০০টি এনকাউন্টার চালানো হয়েছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ অপরাধীর। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৩ জনকে। গুরুতর আহত হয়েছে ৮৩৮ জন অপরাধী।

গত বছর ডিসেম্বরে হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডে পুলিশের হাতে অভিযুক্তদের মৃত্যু নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, সেই সময় উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যোগী সরকারকে বেঁধেন বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতী। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ লাগাতার বেড়েই চলেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। হায়দরাবাদ পুলিশের থেকে শেখা উচিত। কিন্তু এখানে তো অপরাধীদের অতিথির মতো আপ্যায়ন করা হয়। উত্তরপ্রদেশে আসলে জঙ্গল রাজ চলছে।’’

মায়াবতীর এই মন্তব্যের জবাবে টুইটারে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘সংখ্যাই কথা বলবে। আগে জঙ্গল রাজ ছিল। এখন সে সব নেই, গত দু’বছরের বেশি সময়ে পুলিশের সঙ্গে ৫ হাজার ১৭৮টি সংঘর্ষে ১০৩ জন অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছে ১ হাজার ৮৫৯ জন। আত্মসমর্পণ এবং জামিন বাতিল হওয়ায় জেলে গিয়েছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৫ অপরাধী। এখানে কাউকে আপ্যায়ন করা হচ্ছে না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘সংঘর্ষে মারা হতে পারে বিকাশকে’, নিরাপত্তার আর্জি গতকালই জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে​

কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার বা পুলিশ যতই অস্বীকার করুক না কেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিগত কয়েক দশকে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে অপরাধ জগত যে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, তা কারও অজানা নয়। এ বছরের শুরুতে অ্যসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর তরফে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, তাতে দেখা যায়, রাজ্য বিধানসভার ৪০৩ বিধায়কের মধ্যে ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা ঝুলছে। এর মধ্যে বিজেপি বিধায়কের সংখ্যাই ১১৪। সমাজবাদী পার্টির ১৪ জন এবং বহুজন সমাজ পার্টির ৫ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা রয়েছে।

যে বিকাশ দুবের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে যোগী সরকারকে, তার সঙ্গেও বিভিন্ন রাজনীতিকদের ওঠাবসা ছিল বলে জানা গিয়েছে। এমনকি পুলিশের একটা বড় অংশই যে এত দিন তাকে আড়াল করছিল, তদন্তে তা-ও উঠে এসেছে। কিন্তু সে সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়ার আগেই শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে বিকাশের। তাই অনেক প্রশ্নের উত্তর অধরা রয়ে গেল বলে মনে করছে বিরোধী শিবির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement