মুখতার আনসারি। — ফাইল চিত্র।
দু’দিন আগেই জেলবন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার তথা রাজনীতিবিদ মুখতার আনসারির। জেল কর্তৃপক্ষ সরকারি ভাবে মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ বললেও জেলের ভিতরেই মুখতারকে খুন করা হয়েছে বলে গত কাল অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। আর তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই আবার চর্চা শুরু হয়েছে কংগ্রেস নেতা অজয় রাইয়ের দাদা অবধেশ রাইয়ের খুনের ঘটনা নিয়ে।
এ বছরের লোকসভা ভোটে বারাণসী কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আবারও অজয়কে তাদের প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। সমাজবাদী পার্টি, বিজেপি ঘুরে শেষে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন অজয়। এক বৈদ্যুতিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অজয় জানিয়েছিলেন, কী ভাবে চোখের সামনে নিজের দাদা অবধেশকে খুন হতে দেখেছিলেন তিনি। দাদার খুনের জন্য মুখতারের দিকেই শুরু থেকে অভিযোগের আঙুল তুলে এসেছিলেন অজয়। ১৯৯১ সালে খুন হন অবধেশ। শেষ পর্যন্ত গত বছর সেই খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন মুখতার। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তাঁর। অজয়ের দাবি, যাবতীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও ওই মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেননি মুখতার।
আশির দশকে গাজ়িপুর-বারাণসী বেল্টে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি শুরু করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। সেই সময়ে ওই এলাকা ছিল রাজ্যের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম। তখনই পূর্বাঞ্চল নামে এক এলাকা জুড়ে কয়লা উত্তোলন, রেলের নির্মাণ, মদের ব্যবসা, ছাঁটের কারবার মিলিয়ে মোট ১০০ কোটির ব্যবসার দখল কার হাতে থাকবে সেই নিয়ে ব্রিজেশ সিংহ নামে এক প্রভাবশালীর সঙ্গে প্রবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল মুখতারের। অজয় এবং তাঁর দাদা ব্রিজেশের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে মুখতারের সঙ্গে রাই ভাইদের রেষারেষির কথাও লোকের মুখে মুখে ঘুরত তখন। বারাণসীতে দুর্গাপুজোর উৎসবকে সেই সময়েই অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান অবধেশ।
১৯৯১ সালের ৩ অগস্ট অবধেশ এবং অজয় একসঙ্গে বারাণসীর মালদিয়া এলাকার নিজেদের বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁরা দরজা খুলে ঢোকার মুখে আচমকাই একটি গাড়িতে কয়েক জন দুষ্কৃতী এসে গুলি চালাতে শুরু করে। অজয় জানিয়েছেন, তিনি নিজের লাইসেন্স রিভলভার থেকে পাল্টা গুলি চালালে দুষ্কৃতীরা পালায়। তবে তাড়াহুড়োয় গাড়িটি ফেলে যায়। পরে সেই গাড়িই মুখতারকে খুনে দোষী সাব্যস্ত করার অন্যতম প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুখতার-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অজয়। বিচার শুরু হলে এক সময় দেখা যায়, জেনারেল ডায়রির আসল কপিটিও খোয়া গিয়েছে। এর পিছনেও মুখতার আর তাঁর দলবলেরই হাত ছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন অজয়।
দীর্ঘ কাঠখড় পুড়িয়ে এবং আইনি লড়াই শেষে ৩২ বছর পরে দাদার খুনের বিচার পান অজয়। তবে রাজনৈতিক ভাবে এক এক সময়ে মুখতারের দল কোয়ামি একতা দলকে পাশেও পেয়েছেন অজয়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বারাণসীতে মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন অজয়। সেই সময়ে অজয়কেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুখতারের দল। সংবাদ সংস্থা