রাত পোহালেই অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো। সেই নিয়ে উত্তরপ্রদেশ তো বটেই দেশ জুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। তার মধ্যেই প্রস্তাবিত মন্দিরের নকশা প্রকাশ করল শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছবি প্রকাশ করেছে তারা। নির্মাণকার্য সম্পন্ন হলে অযোধ্যার রামমন্দির গোটা বিশ্বে ভারতীয় স্থাপত্যকলার অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিন শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের তরফে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে তিন তলা কাঠামো দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মন্দিরের যে নকশা তৈরি করা হয়েছিল, এটি আয়তনে তার প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে।
শুরুতে ঠিক হয়েছিল মন্দিরে দু’টি গম্বুজ থাকবে। কিন্তু ভক্ত সমাগম বাড়িতে গম্বুজের সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচটি করা হয়েছে। মন্দিরটি তৈরি হবে ভারতীয় স্থাপত্যরীতি মেনে। থাকছে অসংখ্য স্তম্ভ ও বেশ কিছু চূড়া। ‘নগর’ স্থাপত্যশৈলীতে মন্দিরটি নির্মিত হবে বলে জানা গিয়েছে।
১৯৮৮ সালে মন্দিরের প্রাথমিক যে নকশা তৈরি হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল মন্দিরের উচ্চতা ১৪১ ফুট হবে। কিন্তু তার পর ৩০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত ওই ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির তৈরিতে সায় দেওয়ার পর, ওই নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটানো হয়।
আগে ঠিক হয়েছিল সবমিলিয়ে মন্দিরে ২১২টি স্তম্ভ থাকবে। সম্প্রতি স্তম্ভের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬০ করা হয়। মন্দিরে ওঠার সিঁড়িগুলি ১৬ ফুট চওড়া হবে। মন্দিরে দু’টি মণ্ডপও যোগ করা হয়েছে।
মূল মন্দিরটিকে ঘিরে চারটি ছোট ছোট মন্দির থাকবে বলে ঠিক হয়েছে। মন্দিরের ভিত তৈরি করতেই ২ লক্ষ ইট ব্যবহার করা হবে। মন্দির তৈরিতে ব্যবহার করা হবে রাজস্থানের ভরতপুরের অদূরে অবস্থিত বাঁশিপাহাড়পুর থেকে আনা গোলাপি রঙের বেলেপাথর।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা শরদ শর্মা জানিয়েছেন, মন্দিরে ছ’টা ভাগ থাকবে। অগ্রদ্বার, সিংহদ্বার, নৃত্যমণ্ডপ, রংমণ্ডপ, পরিক্রমা এবং গর্ভগৃহ। তিনি বলেন, ‘‘মন্দির তৈরি করতে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ঘনফুট পাথর ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ঘনফুট পাথর কাটা হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির কাজ চলছে।’’
গোটা মন্দির ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি উঁচু বেদির উপর গড়ে তোলা হবে। মন্দিরের প্রথম চত্বরটি হবে ৮ ফুট উঁচু। ওই চত্বর ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে থাকবে ১০ ফুটের চওড়া পরিক্রমা মার্গ। মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে ১৬ ফুট ৩ ইঞ্চির একটি বেদি গড়়ে তার উপরে স্থাপিত হবে রামলালা বিরাজমানের মূর্তি।
মন্দিরের বেশির ভাগ পাথরেই ফুল, দেব-দেবীর কারুকাজ খোদাই করা থাকবে। এই মন্দিরের বহিরঙ্গের সঙ্গে গাঁধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরের মিল পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা। অক্ষরধামের মতোই অযোধ্যায় রামমন্দিরের নকশা তৈরি করেছেন চন্দ্রকান্ত সোমপুরা।
মন্দিরটি তৈরি হতে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। খরচ পড়বে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তবে রাম-লক্ষণ-সীতার মূর্তি তৈরির খরচ আলাদা ধরা হয়েছে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ চালাতে ১০০০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে বলে ধারণা।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে অযোধ্যায় মন্দিরের ভূমিপুজো হবে। তার পর ৪০ কেজি ওজনের রূপোর ইট দিয়ে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরই মন্দির তৈরির কাজ শুরু হবে। মন্দির তৈরির খরচ জোগাড় করতে দেশ জুড়ে অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করবে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র। দেশবাসীর আর্থিক সাহায্যেই গড়ে উঠবে মন্দির নির্মাণের তহবিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের অনুদানের আশা করা হচ্ছে।
দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে ৯টা বেজে ৩৫ মিনিট নাগাদ অযোধ্যার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেলা ১১টা নাগাদ তিনি অযোধ্যায় পৌছতে পারেন। তার পর সাড়ে ১২টা নাগাদ ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান শুরু হবে। সব কিছু মিটতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা মতো সময় লাগবে। তার পর দুপুর আড়াইটে নাগাদ লখনউয়ের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
দেশ জুড়ে করোনার প্রকোপের মধ্যেই অযোধ্যায় ভূমিপুজো নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচার মুখে পড়েছে সরকার। তবে অনুষ্ঠানস্থলে সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৭৫ জন বিশিষ্ট অতিথিকে ভূমিপুজোয় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল, সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত এবং মহন্ত নৃত্য গোপালদাস—এই পাঁচ জনই মঞ্চে থাকবেন।