(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়রাম রমেশ এবং রাহুল গান্ধী। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিলেন সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। সেখানে তৃণমূলের তরফে আসন সমঝোতার বিষয়ে (মূলত কংগ্রেসকে) ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়সীমা শেষ হতে আর ছ’দিন। এর মধ্যে কি সারা দেশের সব রাজ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পারবে ‘ইন্ডিয়া’? নিদেনপক্ষে ৫০ শতাংশ আসনেও কি বোঝাপড়া হওয়া সম্ভব?
‘ইন্ডিয়া’র গত বৈঠকের পর কংগ্রেসের প্রথম সারির দুই নেতা কেসি বেণুগোপাল এবং জয়রাম রমেশ সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, ‘‘সব হয়ে যাবে।’’ সোমবার সেই জয়রাম একটি সাক্ষাৎকারে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করার বিষয়ে দিনক্ষণের উল্লেখ করেননি। তবে কংগ্রেস কী মনোভাব নিয়ে, কী ফর্মুলায় আসন সমঝোতা করতে চায়, তা স্পষ্ট করেছেন তিনি। জয়রামের কথায়, ‘‘উদার মন নিয়েই কংগ্রেস আসন সমঝোতার বিষয়ে কথা বলবে বাকি দলগুলির সঙ্গে। তবে ফর্মুলা একটাই— মন খোলা থাকবে, মুখ থাকবে বন্ধ।’’
পাঁচ রাজ্যের ভোটের পর ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলগুলির বেশির ভাগই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলেছিল। ১৯ তারিখের বৈঠকে এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টি নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের বিরোধী দলনেতা অখিলেশ যাদব। কংগ্রেস নেতা জয়রামের কথায় স্পষ্ট, তাঁরা মুখ বন্ধ করে এবং খোলামন নিয়ে আলোচনা করে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে চান। তবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম এ-ও বলেছেন, রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আসন সমঝোতা হবে। যেমন কেরলে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সমঝোতা হবে না। পঞ্জাব, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আদৌ সমঝোতা হবে কি না, বলা মুশকিল। বাংলায় কংগ্রেস কাদের হাত ধরবে, তৃণমূল না কি বাম, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার উল্টো দিকে কংগ্রেসের নমনীয়তার উপরে উত্তরপ্রদেশের মতো সর্ববৃহৎ রাজ্যে অখিলেশদের সঙ্গে জোটের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তা কি বাকি ছ’দিনে সম্ভব? অনেকেরই মতে, ছ’দিনে সমঝোতা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না। কারণ, আসন সমঝোতা কোনও একটি বৈঠকের বিষয় নয়। সেখানে নানাবিধ দিক থাকে। দরকষাকষি চলে বিস্তর। যারা সারা বছর জোট করে চলে, তাদের মধ্যেও এক দিনে আসন নিয়ে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয় না। প্রসঙ্গত, ‘ইন্ডিয়া’র মুম্বই বৈঠকেই তৃণমূলের তরফে দাবি জানানো হয়েছিল, অক্টোবরের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করা হোক। সেই সময়ে পাঁচ রাজ্যের ভোটের জন্য কংগ্রেস ওই বক্তব্যে খুব একটা আমল দেয়নি। অন্য দলগুলিও বাংলার শাসকদলের সেই প্রস্তাবে খুব একটা গা করেনি। কিন্তু হিন্দি হৃদয়ভূমিতে কংগ্রেসের মুখ থুবড়ে পড়া, তার পরে আঞ্চলিক দলগুলির ‘চাপ’ কিছুটা হলেও কংগ্রেসকে তৎপর করেছে। কিন্তু সেই তৎপরতা আবার এমনও নয় যে, নাওয়াখাওয়া ভুলে বছরের শেষের উৎসবের আবহে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে বসবেন নেতারা। তবে এর মধ্যে আগামী বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সভা করবে ‘ইন্ডিয়া’। নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদর দফতর। সেখানে কোন কোন দলের প্রথম সারির নেতা থাকেন বা থাকেন না, তা দেখেও আসন সমঝোতার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। তবে এক বাক্যে অনেকেই মেনে নিচ্ছেন, ক্যালেন্ডারে ২০২৩ থাকতে থাকতে সারা দেশে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হওয়া মুশকিল।