লখনউয়ের মসনদ কে দখল করবে, শুধু সে-ই পরীক্ষা নয়। শনিবারের সকালে বুথ-ফেরত সমীক্ষারও অগ্নিপরীক্ষা।
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ে অধিকাংশ বুথ-ফেরত সমীক্ষাই বিজেপিকে এগিয়ে রাখছে। যদিও নরেন্দ্র মোদীর দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, তা নিয়ে সবাই একমত হতে পারেনি। যদিও এই হিসেব নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। কারণ এর আগে দিল্লি এবং বিহারে বুথ-ফেরত সমীক্ষা মেলেনি। এমনকী বিদেশেও ব্রিটেনের ব্রেক্সিট বা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের ক্ষেত্রে পূর্বাভাস মেলেনি। এ বার উত্তরপ্রদেশে পূর্বাভাস না মিললে বুথ-ফেরত সমীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে বলে মানছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিও।
এমনিতেই বুথ-ফেরত সমীক্ষা ভোটারদের ভোটদানের প্রবণতা বলতে পারে। সমস্যা হয় আসন ভিত্তিক পূর্বাভাস করতে গিয়ে। পরিসংখ্যানবিদ রাজীব করন্দিকরের যুক্তি, ‘‘বিহারে ছিল বিজেপির সঙ্গে মহাজোটের লড়াই। এ বার উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপি, কংগ্রেস-সপা এবং মায়াবতীর বসপা-র ত্রিমুখী লড়াই। ফলে অঙ্ক আরও কঠিন।’’ দীর্ঘদিন নির্বাচনের পূর্বাভাসের কাজে যুক্ত যোগেন্দ্র যাদব তাই মজা করে বলছেন, ‘‘এ বার ভবিষ্যৎবাণীর সঙ্গে যুক্ত নই বলে নিশ্চিন্তে রয়েছি। শনিবারের জন্য অপেক্ষা করাই ভাল।’’
আরও পড়ুন: কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী, জোর অঙ্ক বিজেপিতে
কেন বুথ-ফেরত সমীক্ষা সব সময় মেলে না? পরিসংখ্যানবিদেরা বলছেন, যে কোনও সমীক্ষার ক্ষেত্রেই সামান্য কিছু লোকের মতামত নিয়ে সকলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা হয়। সেই সামান্য কিছু লোককে এমন ভাবে বেছে নেওয়া হয়, যাতে তার মধ্যে গোটা সমাজের প্রতিনিধিত্ব থাকে। কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষার ক্ষেত্রে তা মানা যায় না। তা ছাড়া বিজেপির ভোটাররা যে ভাবে সমীক্ষকদের সামনে মুখ খুলবেন, মায়াবতীর দলিত ভোটার সে ভাবে কথা না-ও বলতে পারেন। দ্বিতীয় সমস্যা হল, এই সমীক্ষায় কোন দল কত শতাংশ ভোট পাবে, তার হিসেব কষা হয়। তার থেকে আসন ভিত্তিক পূর্বাভাস হয়। কিন্তু একটা দলের ভোট সব আসনে সমান ভাবে ছড়িয়ে থাকে না। তা ছাড়া এ দেশে কেউ ৩০ শতাংশ বা তার থেকেও কম ভোট পেয়ে জিতে যেতে পারেন। পাশাপাশি, কত শতাংশ ভোট এক দলের ঝোলা থেকে আর এক দলের ঝোলায় গিয়ে পড়বে, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। ভোটের এই ঝোলা বদল সব সময় যে একটি দলেরই পক্ষে যাবে, তা-ও কিন্তু নয়।
উত্তরপ্রদেশে পাঁচ বছর আগে বিধানসভা ভোটে সপা ও বসপা-র মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। সে বার সপা পেয়েছিল ৩০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট আর বসপা পেয়েছিল ২৫ শতাংশের মতো ভোট। কিন্তু দু’দলের আসনের ফারাক ছিল ১৪৪টি। আবার গত লোকসভা ভোটে বসপা উত্তরপ্রদেশে প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েও কোনও আসন জেতেনি। সমীক্ষার ক্ষেত্রে আর একটি সমস্যা হল, দু’দলের জোট হলে তাদের ভোটের হারও যোগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আসন ভিত্তিক সেই হিসেব সব সময় মেলে না। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেসের জোট কত পাবে, সেই হিসেবও কিন্তু মেলেনি।