Mystery of MH-370

এমএইচ ৩৭০ রহস্যভেদ কি হবে, ভাইপোদের আগলে অপেক্ষা মোহনের

মুক্তেশ মুখোপাধ্যায়— মোহনের দাদা, সম্ভবত ছিলেন উড়ানের একমাত্র বাঙালি যাত্রী। আদতে কানাডার নাগরিক মুক্তেশ বিয়ে করেছিলেন চিনের কন্যা জিয়োমো-কে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫৬
Share:

মুক্তেশ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী জিয়োমো। — ফাইল চিত্র।

তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি-তে শুধু তিনটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছবি। একটা শক্তপোক্ত। সেটা তাঁর নিজের। বাকি দু’টি কচি।

Advertisement

দশ-দশটা বছর পেরিয়ে গেল পরস্পরকে আঁকড়ে থাকার।

২০১৪-র ৮ মার্চ। কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে, মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০-এর সেই কর্পূরের মতো উবে যাওয়ার পিছনে কোনও কারণ এখনও দেখাতে পারেননি কেউ। মাঝ আকাশ থেকে ২২৭ জন যাত্রী আর ১২ জন বিমানকর্মীকে নিয়ে জলজ্যান্ত বিমান হারিয়ে গেল কোথায়?

Advertisement

দিল্লি থেকে মোহন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আফসোস তো সেখানেই। সাত আর দু’বছরের দুই ছেলেকে চিনে শাশুড়ির কাছে রেখে দাদা-বৌদি ভিয়েতনাম গিয়েছিল বেড়াতে। ওই উড়ানে চিনে ফিরছিল। না পেলাম তাঁদের দেহাংশ। না জানতে পেলাম উড়ানের হারিয়ে যাওয়ার রহস্য।’’

মুক্তেশ মুখোপাধ্যায়— মোহনের দাদা, সম্ভবত ছিলেন উড়ানের একমাত্র বাঙালি যাত্রী। আদতে কানাডার নাগরিক মুক্তেশ বিয়ে করেছিলেন চিনের কন্যা জিয়োমো-কে। দুই ছেলে মিরাভ আর মাইলস-কে নিয়ে ছিল ছবির মতো সংসার। বাকিটা ইতিহাস।

মিরাভ এখন ১৭। মাইলস ১২। ১০ বছর আগের স্মৃতি মাইলসের কাছে অনেকটাই ঝাপসা। কিন্তু, মিরাভের মনে ঘুরে বেড়ায় হাজারো প্রশ্ন। নেটফ্লিক্স, ইউটিউব ঘেঁটে জানতে চায় বাবা-মায়ের হারিয়ে যাওয়ার কারণ। কেন সে দিন কুয়ালা লামপুর থেকে টেক-অফ করে তার নির্দিষ্ট রুট ছেড়ে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে সেই বিমান ধীরে ধীরে দক্ষিণ চিন সাগর থেকে সরে পশ্চিম আকাশে ভারত মহাসাগরের উপরে মিলিয়ে গিয়েছিল, তার রহস্যভেদ করতে উঠে পড়ে লেগেছিল তামাম বিশ্ব। মনে করা হয়েছিল, কোনও এক যান্ত্রিক কারণে মাঝ আকাশে বুঝি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে বিমান। কিন্তু ১ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সামান্য ধ্বংসাবশেষ না-পেয়ে ২০১৭-র জানুয়ারিতে হাল ছেড়ে দেন বিশেষজ্ঞরা। এ শতাব্দীর অন্যতম সেরা রহস্য বলে পরিচিতি পেয়ে যায় তা।

মোহনের কথায়, ‘‘আমরা ঘটনার এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে বসেছিলাম। তার পরে হাল ছেড়ে দিই।’’ জানান, ঘটনার পরে তাঁর ও মুক্তেশের বাবা-মা, মলয় মুখোপাধ্যায় ও উমা, বুকে আগলে নেন সাত ও দুই বছরের দু’টো শিশুকে। ২০২২-এর জানুয়ারিতে মলয়ও চলে যান। তাঁর ভাই, কলকাতার আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দাদার মৃত্যুর পরে বৌদি ও আমার ভাইপো মোহনই দু’টো বাচ্চার যাবতীয় দেখভাল করে।’’ দু’জনেই দিল্লির স্কুলে পড়ে। চিনে তাদের মামাবাড়ি। ম্যান্ডারিন ভাষা শিখে দিদিমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে মিরাভ।

গত ন’বছর ধরে ৮ মার্চে মুক্তেশ-জ়িয়োমোর মৃ্ত্যুদিন পালিত হয়। বিয়ে করবেন না বলে মনস্থির করা মোহনের কথায়, ‘‘দাদা-বৌদি বাইরে খেতে ভালবাসত। সেটা মনে রেখে আমরাও সে ভাবে দিনটাকে উদ্‌যাপন করি।’’

এমনই এক দিন, কোনও এক ডিনার টেবিলে তিনটে হাত লেন্সবন্দি হয়। মোহন-মিরাভ-মাইলস। সেটাই এখন মোহনের হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement