—ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যত উড়িয়ে দেওয়ার পর জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। কংগ্রেসকে গুরুত্ব না দিয়ে সমমনস্ক বিরোধী দলগুলির কাছে নেতৃত্বের বার্তা দিচ্ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ফলাফলের পর কংগ্রেস অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে গেল ঠিকই, তবে জাতীয় স্তরে উঠে এল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি। পঞ্জাবে ঝড় তোলার পর যাদের দাবি, কংগ্রেসের ‘স্বাভাবিক পরিবর্ত’ হিসাবে অদূর ভবিষ্যতে উঠে আসবেন কেজরীওয়াল।
অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়তে না পারলেও ভোট শতাংশ এবং আসনের হিসাবে ২০১৭ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাল ফল করলেন এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব। ফলে উনিশের লোকসভায় এসপি-র যা প্রভাব ছিল, তার থেকে অনেকটাই বেড়ে গেল। গোটা ২০২১ সাল যিনি বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ার চেষ্টায় বিভিন্ন সময়ে তৎপরতা দেখিয়েছেন, সেই এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারও আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, অখিলেশের এই পরাজয়ে মনমরা হওয়া উচিত নয়, কারণ, দেশে তাঁর মর্যাদা যথেষ্ট। সব মিলিয়ে আজকের ভোটের পর জাতীয় বিরোধী রাজনীতি কিছুটা ভিন্ন চেহারা পেতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আপ যে জাতীয় স্তরে চূড়ান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠতে চলেছে তা নিয়ে আজ ধোঁয়াশা রাখেননি দলের নেতা রাঘব চাড্ডা। গণনা শেষ হওয়ার অনেক আগেই আত্মবিশ্বাসী চাড্ডা বলেন, “আগামী দিনগুলিতে আপ জাতীয় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিগণিত হবে।” রাজনৈতিক শিবিরের মতে, পরবর্তী ধাপে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে চান কেজরী। আপ সূত্রের বক্তব্য, বিজেপি এবং কংগ্রেসের পর তারাই একমাত্র দল, যাদের হাতে দু’টি রাজ্য (দিল্লি ও পঞ্জাব) রয়েছে। তাই অ-কংগ্রেস এবং অ-বিজেপি রাজনৈতিক পরিসরে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোটাই অগ্রাধিকার তাদের।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত বিরোধী নেতা হিসাবেই রাজধানীতে একসময় পরিচিত ছিলেন কেজরীওয়াল। কিন্তু ক্রমশ সেই ঘনিষ্ঠতায় কিছুটা দূরত্ব এসেছে। গোয়ার ভোটে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে আপ-কে জোটে আসতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোট হয়নি আপ-এর অনাগ্রহেই।
পাশাপাশি, গত বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-কে হারানোর পরই অখিলেশ বলেছিলেন, মমতার নেতৃত্বে চব্বিশের লোকসভার ভোটে লডাই করতে তাঁর সমস্যা নেই। মমতাও সম্প্রতি অখিলেশের রাজ্যে গিয়ে প্রচার করেছেন। তবে পরের বিধানসভার জন্য বসে না থেকে লোকসভার ভোটে এসপি তার বর্ধিত শক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে, এমনটাই মত রাজনৈতিক শিবিরের। তাই কংগ্রেসকে বাইরে রাখলেও বিরোধী জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নে মমতার পাশাপাশি ডিএমকে নেতা স্টালিন, কেজরীওয়াল এবং অখিলেশের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে লোকসভা ভোটের আগে ১১টি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। ফলে এই মুহুর্তের অঙ্ক তার পর বদলে যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।