(বাঁ দিকে) মুস্কান রস্তোগী এবং সাহিল শুক্ল। সৌরভ রাজপুত (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন মুস্কান রস্তোগী। সে জন্য এক বার মুম্বই চলে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে স্বামী সৌরভ রাজপুতের সঙ্গে তাঁর প্রথম দাম্পত্য কলহ হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, বিবাহবিচ্ছেদের মামলা পর্যন্ত করতে যান প্রাক্তন মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ। উত্তরপ্রদেশের মেরঠ হত্যা মামলায় খুনের সম্ভাব্য কারণ কি স্বামী-স্ত্রীর গন্ডগোল? প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। তবে তদন্তে উঠে এসেছে আরও বেশ কিছু তথ্য। তাই খুনের কারণ একাধিক বলে মনে করছে পুলিশ।
মুস্কান যথেচ্ছ খরচ করতেন। দামি পোশাক কেনা, বড় রেস্তরাঁয় ভাল ভাল খাবার খাওয়া, নতুন নতুন মোবাইল এবং প্রসাধনী কেনার শখ ছিল মুস্কানের। ও দিকে স্বামীর আর্থিক অবস্থা কিংবা মেয়ের শারীরিক অবস্থা নিয়ে মাথা ঘামাননি যুবতী। একই কথা জানাচ্ছেন তাঁর বন্ধুবান্ধবেরাও। নিজের ইচ্ছা এবং স্বপ্নপূরণের জন্য স্বামীকে খুন করতে দ্বিধা করেননি মুস্কান। মার্চেন্ট নেভি অফিসার স্বামীকে ১৫ টুকরো করেছিলেন তিনি। প্রেমিকের সাহায্য নিয়ে দেহের টুকরোগুলো নীল রঙের একটি ড্রামে ভরে উপরে ঢেলে দিয়েছিলেন সিমেন্ট।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মুস্কান অভিনেত্রীর হওয়ার স্বপ্নে এতটাই বিভোর ছিলেন যে, স্বামী-সন্তানকে ক্রমশ দূরে ঠেলছিলেন। আর ওই সময়ে তাঁর কাছাকাছি চলে আসেন ছোটবেলার বন্ধু সাহিল শুক্ল। সন্তান হওয়ার পরে স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে চুটিয়ে মেলামেশা শুরু করেন মুস্কান। দু’জনেই ছিলেন মাদকাসক্ত। মুস্কানের স্বপ্ন এবং পরকীয়ার সম্পর্কে ক্রমশ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন স্বামী। তাই সাহিলের সাহায্য নিয়েই সৌরভকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মুস্কান।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্কুলের বন্ধু সাহিলের সঙ্গে এক বার সৌরভের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মুস্কান। স্বামীকে বলেছিলেন, সাহিল তাঁর খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু ‘ভাল বন্ধু’র সঙ্গে স্ত্রীর ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা মানতে পারেননি মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ। তা ছাড়া সাহিলকে ব্যক্তিগত ভাবেও অপছন্দ করতেন সৌরভ। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘সাহিল সব সময় নেশা করতেন। স্ত্রীর বন্ধু মাতাল, এটা সৌরভের পছন্দ ছিল না। তাই স্ত্রীর সঙ্গে সাহিলের বন্ধুত্ব ভাল ভাবে নেননি তিনি। এই কারণেও মুস্কান সৌরভকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।’’
শুধু তা-ই নয়, স্বামীর কাছে এক সময় বিবাহবিচ্ছেদ চেয়েছিলেন মুস্কান। সৌরভের তেমন আপত্তি ছিল না। কারণ, তিনি নিজেই একটা সময়ে বিচ্ছেদ চান। কিন্তু দুই পরিবার, বিশেষত সৌরভের পরিবার দু’জনকেই বুঝিয়েছিল। সেটাও হত্যার আরও একটি কারণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
মুস্কান আসলে সৌরভকে ছেড়ে সাহিলের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন। দু’জনে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার কথাও ভাবেন। তাঁর স্বপ্নপূরণে স্বামীকে কাঁটা হিসাবে দেখতে শুরু করেন মুস্কান। প্রেম করে যাঁকে বিয়ে করেন, তাঁকেই খুন করার জন্য নানা ছক করতে থাকেন মুস্কান। সৌরভের এক বন্ধুর কথায়, ‘‘মেয়ে পিহুর প্রতি মুস্কানের টান ছিল না। ও কেবল নিজের কথাই ভাবত। নিজের তৈরি জগতে সুখী ছিল। ছবি তুলতে ভালবাসত। সেগুলো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতে পছন্দ করত। ভাল পোশাক, ভাল খাবার এবং নতুন নতুন মোবাইল কেনা ছিল মুস্কানের পছন্দের তালিকায়।’’ তাঁর দাবি, সৌরভদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ নয়। তবে মুস্কানের খরচের হাত যা, তাতে বেশ কয়েক বার আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে সৌরভকে। ওই যুবকের কথায়, ‘‘এক বার ওদের মেয়ে পিহুর ওষুধ কেনার মতো টাকাও ছিল না। আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয়, সৌরভ স্ত্রী-মেয়েকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসলেও মুস্কানের স্বামী-সন্তান নিয়ে আগ্রহ ছিল না।’’