তুষারপাতের দেখা নেই গুলমার্গে। ছবি: সংগৃহীত।
গুলমার্গ, নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তুষারঢাকা পাহাড়, পথ, রাস্তাঘাট। দেশি হোক বিদেশি, জম্মু-কাশ্মীরের এই পর্যটনস্থলের আকর্ষণই আলাদা। এই পর্যটনস্থলটি কাশ্মীরের ‘উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড’ হিসাবে জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। কিন্তু এ বার যেন গুলমার্গের চেনা, সেই আকর্ষণীয় ছবিটা একেবারে উধাও। না, পর্যটকরা যে আসছেন না, এমনটা নয়। তবে প্রকৃতিই যেন এ বার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর তাতেই হতাশ গুলমার্গপ্রেমীরা।
শীত এলেই গুলমার্গের যে ছবিটা পর্যটকদের মনের কোণে ভেসে ওঠে, যার টানে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তাঁরা, তুষারাবৃত সেই মনোমুগ্ধকর ছবি থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছেন। কিন্তু কেন গুলমার্গের এই দশা, কেন সেই তুষারাবৃত চেনা ছবিটা উধাও? মূলত এখানে স্কি পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয়। কিন্তু ঠিক মতো তুষারপাত না হওয়ায় পাহাড়ের ঢালে সেই রোমাঞ্চ উপভোগ করতে পারছেন না। তুষারে ঢাকা গুলমার্গ এখন শুধুই ধূসর রঙের।
গুলমার্গের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী ‘এল নিনো’। তেমনই দাবি করছেন আবহবিদরা। কাশ্মীর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, গোটা ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ একেবারে ‘শুখা’। আগামী দিনে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া পুরোপুরি শুকনো থাকবে। গত তিন-চার বছর ধরে তুষারপাতের একটি ধরন দেখা যাচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই তুষারপাত হচ্ছিল, কিন্তু এ বার সেটাও দেখা যাচ্ছে না। নভেম্বর থেকে ‘এল নিনো’র প্রভাব চলছে। আগামী মাসেও এর প্রভাব দেখা যাবে বলে মনে করছেন কাশ্মীরের আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা।
‘এল নিনো’র প্রভাবে যেমন বৃষ্টিপাত থমকে গিয়েছে, তেমনই তুষারপাতের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গোটা ডিসেম্বরে ৭৯ শতাংশ ঘাটতি ছিল বৃষ্টিপাতের। যার জেরে তাপমাত্রাও খুব একটা নামেনি। ফলে সে ভাবে তুষারপাতও হয়নি।
আবহবিদেরা বলছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম হল, দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে উষ্ণ সমুদ্রের জল পশ্চিমে সরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে। এর উল্টো প্রক্রিয়াটাই ‘এল নিনো’। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের যে-অংশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকার কথা, সেটি উষ্ণ হতে শুরু করে। সমুদ্রের সেই অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসে। তার জেরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। অর্থাৎ এল নিনো হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে আবার এল নিনো দুর্বল হলে কমবে উষ্ণায়নও। কিন্তু এ বছর সেখানেই উল্টো পথে হেঁটেছে প্রকৃতি।