কেন রাশ নেই হিংসায়, প্রশ্ন বিদেশি-নিগ্রহে

ফতেপুর সিক্রিতে সুইস দম্পতিকে নিগ্রহের ঘটনার পরে তৎক্ষণাৎ উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে চিঠি লিখে গোটা ঘটনার কৈফিয়ৎ চেয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ নিয়ে কোণঠাসা নরেন্দ্র মোদী সরকার সম্প্রতি জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের বৈঠকে সাফাই দিয়েছিল— জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে কোনও বিভেদ করে না ভারত। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মুখ আরও কালো করে হিংসা এবং অসহিষ্ণুতার তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে দেশে।

Advertisement

ফতেপুর সিক্রিতে সুইস দম্পতিকে নিগ্রহের ঘটনার পরে তৎক্ষণাৎ উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে চিঠি লিখে গোটা ঘটনার কৈফিয়ৎ চেয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এই ধরনের ঘটনা বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তিকে ফিকে করবে বলেই জানিয়েছিলেন তিনি। এর পরে গত কাল উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র জেলার রবার্টস্গঞ্জ স্টেশনে জার্মান নাগরিকের নিগ্রহের পরে সাউথ ব্লকের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। কারণ, ইউরোপের এই বড় দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সামান্যতম ক্ষত তৈরি হোক, সেটা আদৌ অভিপ্রেত নয় বিদেশ মন্ত্রকের।

তবে এ বার রাজ্য সরকারের কাছে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও বিশেষ মাতামাতি করতে চাইছে না দিল্লি। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দাবি, হোলগার এরিক নামে ওই জার্মান ব্যক্তির রাগ সংবরণ করা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। হিমাচল থেকে এক ব্যক্তি নাকি অভিযোগ করেছেন যে, হোলগার এর আগেও অনেকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি নেতৃত্ব তথা উত্তরপ্রদেশ সরকার আসলে বিষয়টিকে চাপা দিতে ব্যস্ত। তাই আক্রান্ত জার্মান নাগরিকের উপরেই তারা দায় চাপাচ্ছে।

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ঝোলা থেকে সাপটা বারবার বেরিয়ে পড়ছে। সেটিকে আড়াল করতেই এই পাল্টা দোষারোপ। কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা চলছে। তাতে হিংসার ঘটনা কমছে তো নাই-ই, বরং উত্তরোত্তর বাড়ছে। ধর্মীয় কট্টরবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ নিয়ে দেশের মধ্যে বিতর্ক এমনিতেই তুঙ্গে। গো-রক্ষা কর্মসূচি, গোমাংসে বিধিনিষেধ-সহ বিভিন্ন বিষয় সেই বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বিদেশিদের আক্রমণের ঘটনা। সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, ‘‘দেশের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব জেগে উঠলে, তা সব সময়েই ছড়িয়ে যেতে চায়। আঘাত করার জন্য হিংস্র মন তার নিশানা খোঁজে। কোনও একটি সম্প্রদায়ই নয়, বিদেশিরাও সেই নিশানায় চলে আসেন। ভারতে এখন সেটাই চলছে। সরকারের তাতে যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে।’’ তাঁর মতে, যে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং এক ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ চালান করা হচ্ছে, তার ফলেই তৈরি হচ্ছে হিংসা, অসহিষ্ণুতা।

অনেকের মতে, গোরক্ষক তাণ্ডব থেকে বিদেশি পর্যটকদের উপর হিংসা— সবই এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। সরকার বা শাসক গোষ্ঠী অথবা কোনও রাজনৈতিক দল হয়তো অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে না। উত্তরপ্রদেশের স্টেশনের ঘটনাটি হয়তো বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সার্বিক ভাবে অসহিষ্ণুতা এবং হিংসার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা ক্রমশ জাতীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। এই হিংসার বিরুদ্ধে সরকার খড়্গহস্ত না হওয়ায় ক্রমশ মারাত্মক হয়ে উঠছে এই প্রবণতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement