রশ্মি শুক্ল। ছবি: সংগৃহীত।
আর মাত্র তিন দিন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ইডি-র অধিকর্তা পদে সঞ্জয় কুমার মিশ্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তারপরে রাহুল গান্ধী থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত সরেন থেকে মণীশ সিসৌদিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত দেখভালের দায়িত্ব কার হাতে যাবে, তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা চলছে। ইডি-র নতুন অধিকর্তা কে হবেন, মোদী সরকারের অন্দরমহলেও এখন সবাই সে দিকে তাকিয়ে।
সরকারি সূত্রের খবর, ইডি-র নতুন অধিকর্তা পদে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (সিবিডিটি)-র চেয়ারম্যান নীতিন গুপ্ত, সিবিডিটি-র সদস্য প্রবীণ কুমারের নাম ভাবনাচিন্তার মধ্যে থাকতে পারে। ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-এর প্রাক্তন পঙ্কজ কুমার মিশ্রের নামও আলোচনায় থাকবে। বর্তমানে আইএমএফ-এ কর্মরত সীমাঞ্চল দাসের নাম নিয়েও জল্পনা রয়েছে। তাঁর অতীতে ইডি-র উচ্চপদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এঁরা সকলেই সঞ্জয় কুমার মিশ্রের মতো ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস বা আইআরএস অফিসার।
সরকারের একাংশ মনে করছে, এঁদের সবাইকে পিছনে ফেলে মহারাষ্ট্র ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রশ্মি শুক্ল ইডি-র ডিরেক্টর পদের দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কোনও মহিলা অফিসারকে ইডি-র শীর্ষপদে বসানোর কৃতিত্বও দাবি করতে পারবে সরকার। রশ্মি শুক্ল বর্তমানে সশস্ত্র সীমা বলের ডিজি। তিনি মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের আস্থাভাজন বলে পরিচিত। ফডণবীস যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় রশ্মির বিরুদ্ধে বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। উদ্ধব ঠাকরে সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে জোড়া এফআইআর হয়। সম্প্রতি বম্বে হাই কোর্ট সেই এফআইআর খারিজ করে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলে সকলেরই বক্তব্য, নতুন ইডি ডিরেক্টর কে হবেন, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছাড়া কারও তা জানা নেই। মোদী জমানায় ইডি-র ক্ষমতা ও তদন্তের পরিধি দুটোই বেড়েছে। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ইডি-র মামলার সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে। প্রায় সব বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই ইডি-র মামলা রয়েছে। আইন মাফিক কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনারের নেতৃত্বাধীন কমিটি নাম সুপারিশ করবে। তার ভিত্তিতে মোদী-শাহর মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেবে।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, মোদী জমানায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ইডি-তে (অর্থ মন্ত্রকের অধীন) আইআরএস অফিসারদেরই ভিড় বেশি। বিদায়ী অধিকর্তা মিশ্রও আইআরএস অফিসার ছিলেন। তবে এর আগে আইপিএস, আইএএস অফিসাররা ইডি-র শীর্ষ পদে কাজ করেছেন। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে আইপিএস অফিসার কার্নাল সিংহকে ইডি-র অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেছিল। তার আগে আইএএস অফিসার রাজন কাটোচ ওই পদে ছিলেন। ফলে ফের কোনও আইপিএস-কে ইডি-র অধিকর্তা পদে দেখা যেতেই পারে।
২০২০ সালে নভেম্বরে মোদী সরকার সঞ্জয় কুমার মিশ্রকে ইডি-র অধিকর্তা পদে নিয়োগ করেছিল। তার আগে মিশ্র দিল্লিতে আয়কর দফতরের মুখ্য কমিশনার হিসেবে কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজের সাফল্য দেখে তাঁকে ইডি-র অধিকর্তা পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। দু’বছরের মেয়াদ শেষে মোদী সরকারের শীর্ষকর্তাদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠা মিশ্রের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। মিশ্রকে ইডি-র অধিকর্তা পদে আরও বেশি দিন রেখে দিতে মোদী সরকার আইনে সংশোধনও করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের শেষ নির্দেশ অনুযায়ী, ১৫ সেপ্টেম্বর সঞ্জয় কুমার মিশ্রকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। তাই তার উত্তরসূরি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।