দায় নিল না আলফা

বাঙালিদের উপরে হামলা চালাতে পারে আলফা, সাত দিন আগেই সতর্ক করেছিল দিল্লি!

আলফা যে বেছে বেছে বাঙালিদের উপরে হামলা চালাতে পারে, দিন সাতেক আগে সেই তথ্য অসম সরকারকে জানিয়েছিল কেন্দ্র।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

গুয়াহাটি ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৮
Share:

স্বজনহারা: জঙ্গিদের গুলিতে নিহতদের পরিজনেরা। শুক্রবার তিনসুকিয়ায়। পিটিআই

আলফা যে বেছে বেছে বাঙালিদের উপরে হামলা চালাতে পারে, দিন সাতেক আগে সেই তথ্য অসম সরকারকে জানিয়েছিল কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও খেরবাড়ি-হামলায় পাঁচ জন বাঙালি প্রাণ হারানোয় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অসম সরকারকে অবিলম্বে কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

Advertisement

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘অসমে গরিব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।... গুজরাতে বিহারি খেদাও, অসমে বাঙালি খেদাও হচ্ছে।’’

গত রাতের এই হত্যাকাণ্ডে প্রাথমিক ভাবে আলফাকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল। কিন্তু আজ সকালে পরেশ বরুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (স্বাধীন) বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করে, তিনসুকিয়ার এই হত্যাকাণ্ডে তারা জড়িত নয়। এর পরেই বাঙালি নিধনের দায়ভার নিয়ে অসমে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। সমাজকর্মী অখিল গগৈ আঙুল তুলেছেন সরকারের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ঘোলা জলে মাছ ধরতে সরকারই এই কাণ্ড ঘটায়নি তো! আলোচনাপন্থী আলফা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে আজ। কারণ, আলোচনাপন্থী দুই নেতা, মৃণাল হাজরিকা এবং জিতেন দত্ত সম্প্রতি বাঙালি দমনের হুমকি দিয়েছিলেন। পুলিশ আজ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গুয়াহাটির পানবাজারে মৃণাল হাজরিকা ও শিবসাগরের গৌরীসাগরে জিতেন দত্তকে ডেকে পাঠায়। পরে দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘ক’দিন আগেই ওরা বলে গিয়েছিল, বাড়াবাড়ি করলে ঘরে ঘরে ঢুকে মারা হবে’

অক্টোবর মাসের প্রথমে বিস্ফোরণ ও গত কাল বাঙালি-নিধনের ঘটনায় এ বার অশনি সঙ্কেত দেখছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, কেন্দ্র মনে করছে, নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে অসমে অসমিয়া ও বাঙালিদের মধ্যে যে বিভেদের সূত্রপাত হয়েছে, তাকে কাজে লাগাতে চাইছে পরেশ বড়ুয়া গোষ্ঠী-সহ আরও অনেকেই। ফলে এ ধরনের হামলা আরও বাড়তে পারে। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র ওই হামলার পিছনে আলফা (স্বাধীন) গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে ধরে নিলেও,

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের মতে, নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে অসম স্পর্শকাতর হয়ে রয়েছে। সেই সুযোগে আলফার নাম নিয়ে অন্য সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিও ওই কাজ করতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, গত কাল গভীর রাত থেকেই জঙ্গিদের গ্রেফতার করার জন্য সেনা-অভিযান শুরু হয়েছে। অসম-অরুণাচল সীমানায় ভারতীয় সেনা তল্লাশি শুরু করেছে। অন্য দিকে, ভারত-মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে যাতে জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য অভিযানে নেমেছে আসাম রাইফেলসও। ডিজি কুলধর শইকিয়া ও এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মুকেশ আগরওয়াল ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। ডিজি বলেন, ‘‘আলফা (স্বাধীন) দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দিলেও তারা সন্দেহের বাইরে নয়। প্রকৃত আততায়ীদের সন্ধান চলছে। কেউ পার পাবে না।’’

এ দিন ঘটনাস্থল থেকে একে সিরিজের ৩০টি খালি কার্তুজ, একে-৮১ রাইফেলের গুলিও মিলেছে। যা শুধুমাত্র জঙ্গিদের কাছেই থাকে। তবে পুলিশ, সেনাবাহিনী ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে ধরতে না পারায় এলাকায় অসন্তোষ বাড়ছে। পাশেই প্রতিবেশী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ। তাই সাহায্য চাওয়া হয়েছে অরুণাচল পুলিশেরও।

আরও পড়ুন: বাঙালি নিধন ঘিরে অসমে রাজনৈতিক চাপান-উতোর

সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের ডাকে তিনসুকিয়ায় আজ বন্‌ধ ডাকা হয়েছিল। টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ চলে। মন্ত্রী কেশব মহন্ত, তপন গগৈ, পরিমল শুক্ল বৈদ্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পাঁচটি দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। দাবি ছিল, ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনের চাকরি।

মন্ত্রীরা অবিলম্বে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও এক জনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ছাড়া হয়। ফেডারেশন আগামী কাল ২৪ ঘণ্টার অসম (তিনসুকিয়া ছাড়া) বন্‌ধের ডাক দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement