সোলাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। সে গ্রামে একেবারেই গুরুত্ব নেই পড়াশোনার। ছেলে হলে শৈশবেই উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়া এবং মেয়ে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে ‘বোঝা নামানো’, এটাই যেন চিরকালীন রীতি ছিল সেখানে।
প্রত্যন্ত গ্রামের সেই ছেলেই আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত শিক্ষক। শিক্ষকতায় ‘নোবেল পুরস্কার’ পেলেন। মাত্র ১১ বছরেই বদলে ফেলেছেন গ্রামের ছবিটাও।
তিনি রঞ্জিত সিংহ দিসালে। মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলায় একটি ছোট গ্রাম পরিতেয়ারি। সেই গ্রামেই জন্ম তাঁর।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী ছিলেন। বড় হয়ে চেয়েছিলেন তথ্য প্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার হতে।
সেই মতো একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তিও হন। কিন্তু যেমন ভেবেছিলেন তেমনটা হল না। ইঞ্জিনিয়ারিং তাঁর জন্য ছিল না। পরে বাবার কথাতেই তিনি শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণের শুরুর দিকে একেবারেই পড়াশোনায় মন বসতে চাইত না তাঁর। ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেন শিক্ষকরাই হলেন সমাজের প্রকৃত রূপকার। তার পর যত দিন গিয়েছে শিক্ষকতাকে ভালবেসে ফেলেছেন।
প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ২০০৯ সালে তাঁর গ্রামেরই জেলা পরিষদের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি।
স্কুলের পাশেই ছিল গোয়ালঘর। অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ছিল। তার উপর গ্রামে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাতেন না অভিভাবকরা।
খুব কম সংখ্যক মেয়ে স্কুলে ভর্তি হত। তার মধ্যে আবার হাতেগোনা কয়েক জনকেই মাঝে মধ্যে স্কুলে আসতে দেখা যেত।
গ্রামে পড়াশোনার পরিবেশ গড়ে তুলতে সেই থেকেই লড়াই শুরু করেন তিনি। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে অভিভাবকদের বুঝিয়ে একপ্রকার জোর করেই ছেলে-মেয়েদের স্কুলমুখী করে তোলেন।
কঠোর পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন। এখন ওই গ্রামে এক জন নাবালিকারও বিয়ে হয় না। বরং স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি প্রায় ১০০ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, পড়ুয়াদের সুবিধার্থে পড়ার বইগুলিকে তাঁদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে দিয়েছেন তিনিই। এমনকি বইগুলিতে কিউআর কোডের ব্যবস্থাও রেখেছেন। এতেই অনেক উপকৃত হয়েছে পড়ুয়ারা।
এই অসাধারণ কাজের জন্য ২০২০ সালে ‘বিশ্ব শিক্ষক’ পুরস্কার পান তিনি। পুরস্কার মূল্য ১০ লাখ ডলার!
২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর এই পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। শিক্ষকরা একে নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে তুলনা করেন।
তবে এই পুরস্কার মূল্যের পুরোটা নিতে রাজি নন তিনি। বরং তালিকায় থাকা তাঁর পরবর্তী ৯ জন শিক্ষকের সঙ্গে সমান ভাগে ভাগ করে নিতে চান তিনি। ফলে প্রত্যেকে ৫৫ হাজার ডলার করে পাবেন।
সম্প্রতি আরও একটি পালক জুড়েছে তাঁর মুকুটে। বিশ্বব্যাঙ্ক তাঁকে তাদের ‘শিক্ষা পরামর্শদাতা’ হিসাবে নিয়োগ করেছে।