ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের অন্দরমহল নয়, যেন বিভ্রান্তির আসর!
২৪ নম্বর আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতরে এখন শুধু নানা রকম প্রশ্ন উড়ে বেড়াচ্ছে। কে গাঁধী পরিবারের দিকে, আর কে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে? কে গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন, কাদের উপরে গাঁধী পরিবার বিরাগভাজন? কারা দলে থাকছেন, কারা দল ছাড়তে তৈরি হচ্ছেন? এর কোনও উত্তর কেউই খুঁজে পাচ্ছেন না।
সবাইকে অগ্রাহ্য করে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা নভজ্যোৎ সিংহ সিধুকে পঞ্জাবের প্রদেশ সভাপতি করেছিলেন। তিনি আচমকাই পদত্যাগ করার পরে কপিল সিব্বলের মতো কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা সরব হয়েছেন। কংগ্রেসের অন্দরে এখন প্রশ্ন, হাই কমান্ড কি এ বার সিব্বলের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে? রাহুল শিবিরের কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। মনে করা হচ্ছে, সেই বৈঠকেই বিক্ষুব্ধ নেতাদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শুধুই সিব্বল, না কি তাঁর সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্য নেতাদের উপরেও কোপ পড়বে?
দিগ্বিজয় সিংহ এত দিন গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন বলেই পরিচিত ছিলেন। পঞ্জাব নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে অস্থিরতার মধ্যেই তিনি বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা অমিত শাহ ও আরএসএসের প্রশংসা করেছেন। দিগ্বিজয়কে সম্প্রতি সনিয়া গাঁধী দেশ জুড়ে বিক্ষোভের পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেন। সেই দিগ্বিজয়ই বর্ণনা দিয়েছেন, গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্রে যাওয়ার সময়ে জঙ্গলের মধ্যে কী ভাবে তাঁর জন্য সাহায্য পাঠিয়েছিলেন অমিত শাহ। তিনি যেখানেই যান, সেখানেই আরএসএস নেতারা তাঁর সঙ্গে এসে আলোচনায় বসেন বলেও দিগ্বিজয় জানান।
দিগ্বিজয়ের আগেই থেকেই কংগ্রেসের অন্দরে বিভ্রান্তি রয়েছে প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-কে নিয়ে। পিকে কংগ্রেসে যোগ দেবেন বলে বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছে। তিনি সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার আগে পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহের উপদেষ্টাও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ভোটের পরে সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন। পঞ্জাবে কংগ্রেস সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে বলে পিকে-র সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতেই না কি অমরেন্দ্রকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা! আবার কংগ্রেস থেকে লুইজ়িনহো ফেলেরোকে তৃণমূল কংগ্রেসে আনতে সেই প্রশান্ত কিশোরই প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন। কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন, পিকে কংগ্রেস ভাঙছেন না গড়ছেন?
পঞ্জাবে সিধুর পদত্যাগের পরে সিব্বল প্রশ্ন তুলেছিলেন, কংগ্রেসে কোনও নির্বাচিত সভাপতি নেই, তা হলে সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছেন? তার পরেই একদল কংগ্রেস কর্মী সিব্বলের বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন। গুলাম নবি আজাদ, মণীশ তিওয়ারি, আনন্দ শর্মার মতো ‘জি-২৩’-র সদস্যেরা তো বটেই, পি চিদম্বরমও এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। কিন্তু গাঁধী পরিবারের কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি। আজ কংগ্রেসের বাইরে থেকে গীতিকার জাভেদ আখতার প্রশ্ন তুলেছেন, রাহুল গাঁধী কেন এই ঘটনার নিন্দা করছেন না? সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া কানহাইয়া কুমার খোলাখুলিই বলেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্বের যত সমালোচনা হবে, ততই বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে।
কেরল সফর থেকে ফেরার পরে রাহুল আজ দলের সংখ্যালঘু মোর্চার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন। মোর্চার চেয়ারম্যান ইমরান প্রতাপগড়ির হাতে বরেলী শরিফ দরগার জন্য চাদর তুলে দেন তিনি। সেই প্রতিনিধি দলে আজিজ মির্জা নামের এক কংগ্রেস নেতা ছিলেন, যিনি সিব্বলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, রাহুলের কি সিব্বলের বাড়িতে বিক্ষোভে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে?
কংগ্রেস নেতাদের একাংশ আশা করছেন, আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেই সভাপতি নির্বাচনের সূচি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাহুল কি সভাপতির দায়িত্ব নেবেন? কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘দলের সব থেকে বড় বিভ্রান্তির বিষয় হল, সবাই যখন রাহুলকে দলের নেতা মানছেন, তখন তিনি সভাপতি হতে চাইছেন না কেন? আর রাহুল যদি সভাপতিই না হতে চান, তা হলে সব সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন কেন?”