রাত ২টোয় কে বাইক ছোটান, বলেননি অমিত

হামলার আশঙ্কা কমার যুক্তিতে গাঁধী পরিবারের এসপিজি সুরক্ষা প্রত্যাহার করা হয়েছে এ মাসেই। এই আবহে আজ লোকসভায় ছিল এসপিজি বিল নিয়ে বিতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১১
Share:

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।

রাত দু’টো। দিল্লির পথে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে ছুটছে দামি বাইক। পিছনে পাল্লা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন প্রশিক্ষিত স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর নিরাপত্তাকর্মীরা। কে সেই গাঁধী পরিবারের ব্যক্তি যিনি এ ভাবে গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন! লোকসভায় এসপিজি আইন সংশোধনী নিয়ে বিতর্কে নামটি বলতে গিয়েও গিলে ফেললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Advertisement

হামলার আশঙ্কা কমার যুক্তিতে গাঁধী পরিবারের এসপিজি সুরক্ষা প্রত্যাহার করা হয়েছে এ মাসেই। এই আবহে আজ লোকসভায় ছিল এসপিজি বিল নিয়ে বিতর্ক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য শেষ হতেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কে এই গাঁধী পরিবারের সদস্য! সনিয়া গাঁধী তো হবেন না। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার বাইক প্রীতির কথা তেমন শোনা যায়নি। বাকি রইলেন দু’জন। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢরা। রবার্টের বিদেশি গাড়ি-বাইক চালানোর শখ রয়েছে। কিন্তু তিনি তো প্রিয়ঙ্কা না-থাকলে এসপিজি নিরাপত্তা পাবেন না! তা হলে কি রবার্টের বাইকের পিছনে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা? না কি রাহুল গাঁধী সম্পর্কে ওই কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? জবাব মেলেনি।

গাঁধী পরিবারের কোন সদস্য কত বার এসপিজি এড়িয়ে যাত্রা করেছেন, প্রথমে তার সংখ্যা বলেই থেমে যান অমিত। কংগ্রেস বেঞ্চ থেকে বিস্তারিত তথ্যের দাবি উঠতেই অমিত পুরো খতিয়ান পেশ করেন। তথ্য চেয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায় কংগ্রেস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া হিসেব বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত সনিয়া দিল্লিতে অন্তত ৫০ বার সাধারণ গাড়িতে যাতায়াত করেছেন। প্রিয়ঙ্কা গত পাঁচ বছরে দিল্লিতে ৩৩৯টি ও দিল্লির বাইরে ৬৪টি স্থানে যাতায়াতে বুলেট প্রুফ গাড়ি নেননি। ১৯৯১ থেকে ৯৯টি বিদেশ সফরের মধ্যে ৭৮টি ক্ষেত্রে এসপিজিকে জানাননি। সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন রাহুল। গত পাঁচ বছরে দিল্লিতে ১৮৯২ বার ও দিল্লির বাইরে ২৪৭ বার এসপিজি ছাড়া সফর করেছেন। যা নিয়ে তিনি কাউকে কিছু জানাতে চাননি।

Advertisement

কেন এত গোপনীয়তা? এই প্রশ্ন তুলে অমিতের কটাক্ষ, ‘‘রাজনাথ সিংহ তো নিরাপত্তা পান। তাঁকে তো শৌচাগার পর্যন্ত ছেড়ে আসেন কালো কাপড় পরা নিরাপত্তারক্ষীরা। রাহুলের এত কী গোপন করার আছে?’’

এসপিজি আইন সংশোধনের যুক্তি হিসেবে কেন্দ্রের বক্তব্য, এখন থেকে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারি বাসভবনে বসবাসকারী ‘পরিবার’-এর সদস্যরা এসপিজি নিরাপত্তা পাবেন। প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ফুরানোর পরে আরও পাঁচ বছর সেই সুরক্ষা পাবেন তাঁরা। বর্তমান আইনে মেয়াদের বিষয়টি স্পষ্ট বলা নেই। এসপিজি সুরক্ষা পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় সমস্যা হচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদীর পরিবার তাঁর সঙ্গে থাকেন না। সৌগত রায় জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর বাবা-মা যদি আলাদা থাকেন সে ক্ষেত্রে কি তাঁরা এসপিজি পাবেন? জবাব এড়িয়ে যান অমিত।

কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, অতীতে রাজীব গাঁধীর নিরাপত্তা কমানো ও তাঁর মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, একই ভুল করছে সরকার। কংগ্রেসের গৌরব গগৈয়ের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী মোদীও কি সাবরমতী নদীতে বিদেশি পাইলটের চালানো এক ইঞ্জিনের সি-প্লেনে চেপে সুরক্ষা ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করেননি? অমিত বলেন, ‘‘বিমানটি ভাল করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। প্লেনে এসপিজি কর্মী ছিলেন। তা ছাড়া গুজরাতের পর্যটনের প্রসারে তিনি তা করেছিলেন। রাত দু’টোয় বাইক চালিয়ে নিয়ম ভাঙেননি।’’ জবাবে অসন্তুষ্ট কংগ্রেস বিল পাশের আগে ওয়াক আউট করে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement