ছবি: পিটিআই।
যদি কাউকে আঘাত করে থাকেন, তা হলে ক্ষমা চেয়ে নিতে অসুবিধা কোথায়? আদালত অবমাননা মামলার শুনানির সময়ে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের উদ্দেশে আজ এই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে এবং সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে দু’টি টুইট করে আদালত অবমাননার মামলায় ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন প্রশান্ত। তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে ওই টুইটগুলির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করতে রাজি হননি তিনি। ক্ষমা চাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে গত কাল পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। কিন্তু প্রশান্ত তাতে রাজি না হওয়ায় শাস্তিদানের বিষয়টি নিয়ে আজ শুনানি হয়। সেই সময়েই নিজের অবস্থান বদলের জন্য প্রশান্তকে আধ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও নিজের বক্তব্য পরিবর্তনের বদলে সুপ্রিম কোর্টের রায় বদলের জন্যই সওয়াল করেন প্রশান্তের আইনজীবী।
প্রশান্তের হয়ে আইনজীবী রাজীব ধবন বলেন, তাঁর মক্কেলকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায় প্রত্যাহার করে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের উচিত ‘রাষ্ট্রনায়কোচিত বার্তা’ দেওয়া। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টকে সমালোচনা শুনতে হবে। শুধু সমালোচনাই নয়, চূড়ান্ত সমালোচনা। কারণ, শীর্ষ আদালতের কাঁধ অনেক চওড়া।’’ বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চের সামনে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, প্রশান্ত নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিন, দুঃখপ্রকাশ করুন। আদালতের উচিত হবে তাঁকে সতর্ক করে দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া।
আরও পড়ুন: সনিয়া ও মমতার ডাকে বৈঠক আজ, নিট-জেইই নিয়ে একজোট বিরোধীরা
আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে কমেছে খরচ, থমকে বৃদ্ধির হার
প্রশান্তের আইনজীবী অবশ্য সেই প্রস্তাবও মেনে নেননি। ধবনের বক্তব্য, সতর্ক করা চলবে না। তাঁর মক্কেলকে একটি বার্তা দিয়ে ক্ষমা করা হোক। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে প্রশান্ত যাতে কিছুটা সতর্ক হয়ে কথা বলেন, সেটা বলাই যথেষ্ট হবে। কারণ, কাউকে চিরকালের জন্য চুপ করিয়ে রাখা সম্ভব নয়। প্রশান্তের কী শাস্তি হওয়া উচিত, বিচারপতিরা তা জানতে চাইলে ধবন বলেন, ‘‘ওকে শহিদ বানিয়ে দেবেন না। প্রশান্ত খুন কিংবা চুরি কোনওটাই করেননি।’’ তাঁর বক্তব্য, আদালত কী শাস্তি দেয়, বিতর্ক জিইয়ে থাকার বিষয়টি তার উপরেই নির্ভর করবে। বিতর্ক তবেই থামবে, শীর্ষ আদালত যদি রাষ্ট্রনায়কোচিত মনোভাব দেখায়।
অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দিয়েছিলেন, বিভিন্ন বিচারপতি ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। ফলে প্রশান্তের বক্তব্যকে অন্য ভাবে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। বেণুগোপাল ও ধবনের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতিরা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশান্ত ভূষণের থেকে অন্যরকম বক্তব্য আশা করেছিল। তবে টুইটের স্বপক্ষে্ তিনি যে জবাব দিয়েছেন, তা দুঃখজনক, একেবারেই ঠিক নয়। ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবীর এই রকম ব্যবহার করা উচিত নয়। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আইনজীবীদের থেকে আমরা আলাদা কিছু নই। আমরাও আইনজীবী হয়েই এখানে এসেছি। শীর্ষ আদালত সমালোচনা শুনতে রাজি আছে। ঠিক ভাবে সমালোচনা হলে, তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মঙ্গল। কিন্তু ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারি না আমরা। আমাদের পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে হবে।’’ কারণ বিচারপতিদের যুক্তি, ‘‘আমরা যদি নিজেদের ধ্বংস করতে নামি, তা হলে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে বিচারব্যবস্থা থেকে। আর শুধু আক্রমণ করলেই চলে না। কারণ, বিচারপতিরা নিজেদের পক্ষ নিয়ে বলতে সংবাদ মাধ্যমের কাছে চলে যেতে পারেন না।’’ বিচারপতি মিশ্র বলেন, ‘‘কারও প্রতি আমাদের একপেশে মনোভাব নেই। ভাববেন না আমরা সমালোচনা সহ্য করতে পারি না। মানহানির মামলা পড়ে আছে, কিন্তু ওঁকে কি কখনও শাস্তি দেওয়া হয়েছে? আর আমি যখন অবসর নিতে যাচ্ছি, দুঃখের ব্যাপার সেই সময়েই এমন সব ঘটনা ঘটছে।’’
এই মামলায় প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়টি নিয়ে আজ কোনও ফয়সালা শোনায়নি আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ২০০৯ সালের অন্য মামলাটির শুনানি হতে চলেছে ১০ সেপ্টেম্বরে। তার আগেই অবশ্য বিচারপতি মিশ্র অবসর নেবেন।