মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ হয় ‘এক দেশ, এক ভোট’ সংক্রান্ত দু’টি বিল। —ফাইল চিত্র।
তীব্র বাগ্বিতণ্ডার মাঝে ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল লোকসভায় পেশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল এ সংক্রান্ত ১২৯তম সংবিধান সংশোধনী বিল এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন (সংশোধনী) বিল লোকসভায় পেশ করার পর বিরোধীদের আপত্তিতে তা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে সরকারের পক্ষে বেশি ভোট পড়ায় বিল পেশ করা গেলেও তা পাশ করানো সম্ভব হয়নি। বিল দু’টি কবে আইনে পরিণত হবে, কবে থেকে কার্যকর হবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে সংসদের যৌথ কমিটিতে (জয়েন্ট কমিটি অফ পার্লামেন্ট)।
সাধারণত সংসদের এই জাতীয় যৌথ কমিটিতে সর্বাধিক ৩১ জন সদস্য থাকতে পারেন। তার মধ্যে ২১ জনই লোকসভার সদস্য। থাকবেন রাজ্যসভার সদস্যেরাও। যৌথ কমিটিতে কোন দলের কত জন সদস্য থাকবেন, তা নির্ভর করে ওই দলের মোট সাংসদ সংখ্যার উপর। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ শুক্রবার শেষ হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের সদস্যদের নাম প্রস্তাব করার কথা বলা হয়েছে। তবে যে হেতু সাংসদ সংখ্যার বিচারে লোকসভায় বিজেপিই একক বৃহত্তম দল, তাই কমিটিতে তাদেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। কমিটির সভাপতির পদেও বসবেন কোনও এক বিজেপি সাংসদই।
সূত্রের খবর, এই যৌথ কমিটির মেয়াদ থাকতে পারে ৯০ দিন। পরে প্রয়োজন হলে তা বৃদ্ধি করা হতে পারে। বিল দু’টিতে কোথাও কোনও সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা বিবেচনা করে দেখবে এই কমিটি। এর পরে বিল দু’টি নিয়ে ভোটাভুটি হবে লোকসভায়। পাশ হলে তা রাজ্যসভায় পাঠানো হবে। সেখানে পাশ হলে, পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে ধীর গতিতে এগোতে চাইছে বিজেপি। বিল পেশের পরও আলোচনার দরজা খোলা রাখার পক্ষপাতী তারা। কারণ সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত এই বিল পাশ করাতে সংসদের দু’কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার প্রয়োজন নরেন্দ্র মোদী সরকারের। বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসভা বা রাজ্যসভা কোনও কক্ষেই সরকারের হাতে তা নেই। বিরোধীরা আপত্তি জানাতে পারে, তা আঁচ করে কেন্দ্র আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল বিল দু’টি সংসদের যৌথ কমিটিতে যাবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মঙ্গলবার সংসদে বলতে শোনা গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও চান বিল নিয়ে যৌথ কমিটিতে আলোচনা হোক। শুধু কমিটির সদস্য নন, অন্যান্য সাংসদ, দেশের আইনি, সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ যেমন প্রাক্তন বিচারপতি বা আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন সদস্যদের সঙ্গেও এই বিল নিয়ে আলোচনা করতে পারে কেন্দ্র। এমনকি, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার স্পিকারদের মত নেওয়ার পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের মানুষ এই বিল নিয়ে কী ভাবছেন, তা-ও শোনা হবে বলে দাবি এক সূত্রের।