Government Spending

সরকারি খরচ বৃদ্ধির পক্ষে ফের সওয়াল

মাথাপিছু জিডিপি-র মাপকাঠিতে ভারত চলতি বছরে বাংলাদেশের থেকেও পিছিয়ে পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৫১
Share:

ফাইল চিত্র।

উৎসবের মরসুমে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের দশ হাজার টাকা অগ্রিম বা নগদে এলটিসি-র টাকা দিলে বাজারে সাময়িক কেনাকাটা বাড়তে পারে। কিন্তু তাতে অর্থনীতি বিশেষ চাঙ্গা হবে না। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য মোদী সরকারকে সাহস করে কোষাগার থেকে টাকা খরচ করতে হবে বলে আরও এক বার জানিয়ে দিলেন বিশ্বের প্রথম সারির অর্থনীতিবিদেরা। অর্থনীতির মূল্যায়নকারী সংস্থাগুলিরও একই অভিমত।

Advertisement

মাথাপিছু জিডিপি-র মাপকাঠিতে ভারত চলতি বছরে বাংলাদেশের থেকেও পিছিয়ে পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। তা নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা যুক্তি দেন, ক্রয়ক্ষমতার সাযুজ্য বিচারে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯-এ ১১ গুণ বেশি ছিল। ২০২০-তেও সেই মাপকাঠিতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারত এগিয়ে থাকবে।

কিন্তু সরকারের এই তত্ত্ব কার্যত উড়িয়ে দিয়ে আজ বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন, মাথাপিছু জিডিপি-র নিরিখে বাংলাদেশের থেকেও ভারতের পিছিয়ে পড়াটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কারণ ৫ বছর আগেও বাংলাদেশের তুলনায় ভারত ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল। ইউপিএ-সরকারের আমলে অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিকের মত, এ থেকেই বোঝা যায়, সাহসী আর্থিক বা সুদ নীতির প্রয়োজন।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাইলট প্রশিক্ষণে বেসরকারি সংস্থা

এর আগে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম, রঘুরাম রাজন, অরবিন্দ পানাগড়িয়ার মতো অর্থনীতিবিদেরাও বলেছেন, রাজকোষ ঘাটতির কথা না-ভেবে মোদী সরকারের সরকারি খরচ বাড়ানো উচিত। কিন্তু দু’দফায় আর্থিক দাওয়াই ঘোষণা করলেও কেন্দ্র রাজকোষ থেকে বিশেষ অর্থ খরচ করেনি। প্রথমে ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্যাকেজে মূলত ব্যাঙ্কের ঋণের উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। এ বার পুজোর অগ্রিম-এলটিসি ও পরিকাঠামোয় খরচের ঘোষণাতেও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সরকারি কোষাগারের দরজা বিশেষ খোলেননি।

আজ আর্থিক মূল্যায়নকারী সংস্থা মুডি’জ জানিয়েছে, মোদী সরকারের এই দ্বিতীয় দাওয়াইয়ে সাময়িক ভাবে বাজারে কেনাকাটা বাড়বে। কিন্তু আর্থিক বৃদ্ধিতে যৎসামান্য লাভ হবে। সংস্থার মতে, এই দাওয়াইয়ের পরিমাণ জিডিপি-র মাত্র ০.২ শতাংশ। এর সঙ্গে যদি প্রথম দফার দাওয়াই যোগ করা হয়, তা হলেও মোদী সরকার জিডিপি-র মাত্র ১.২ শতাংশ খরচ করছে। তুলনায় ভারতের সঙ্গে এক সারিতে থাকা দেশগুলি খরচ করেছে গড়ে জিডিপি-র প্রায় ২.৫ শতাংশ।

মুডি’জ-এর মতে, এর থেকেই স্পষ্ট, ভারতের সরকারি কোষাগারের অবস্থা খুবই দুর্বল। কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে সরকারি ঋণের বোঝা চলতি বছরে ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯০ শতাংশে পৌঁছবে। এক দিকে জিডিপি-র বহর কমে যাওয়া, অন্য দিকে লকডাউনের আগেই অর্থনীতির ঝিমুনি ঠেকাতে কর্পোরেট করের হার কমানোর ফলে চলতি বছরে কেন্দ্র-রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতি ১২ শতাংশ ছোঁবে।

আরও পড়ুন: ফ্লিপকার্টের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজন সাহসী আর্থিক নীতি। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার উল্টে বিভাজনের নীতিতে ব্যস্ত। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ পাকিস্তান, ইরাক, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, সিরিয়া, আফগানিস্তানের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘‘এই দেশগুলির রাষ্ট্রনেতারা ভিতর থেকে বিভাজন তৈরি করে তাঁদের দেশকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিলেন। তার মূল্য সাধারণ মানুষকে রক্ত ও চোখের জলে চোকাতে হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement